রুবিওর হুঁশিয়ারি
ইউক্রেন শান্তি আলোচনা থেকে ‘সরে যাবে’ যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ২০:২৯

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সতর্ক করে বলেছেন, কয়েক দিনের মধ্যে যদি যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট কোনো সম্ভাবনা না দেখা যায়, তাহলে রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তিচেষ্টা থেকে সরে আসবে যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি বলেন, ‘আমরা সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস ধরে এই চেষ্টায় লেগে থাকব না। যুক্তরাষ্ট্রের সামনে আরও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার আছে।’
রাশিয়া ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় সামরিক অভিযান চালায়। যেকোনো সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির জন্য বেশ কিছু শর্ত দেয়।
যদিও ট্রাম্প প্রশাসন শুরুতে আশাবাদী ছিল যে দ্রুত একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির কোনো বাস্তব ফলাফল দেখা যায়নি। এর জন্য ওয়াশিংটন দুই পক্ষকেই দোষারোপ করছে।
বৃহস্পতিবার প্যারিসে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার পর শুক্রবার সাংবাদিকদের রুবিও বলেন, ‘আমাদের এখন খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে—মানে কয়েক দিনের মধ্যেই—এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নযোগ্য কি না।’
তিনি বলেন, ‘যদি না হয়, তাহলে আমরা এই আলোচনা থেকে সরে যাব।’
রুবিও বলেন, একটি শান্তিচুক্তি করা কঠিন হবে তা স্পষ্ট, তবে দ্রুতই কিছু ইতিবাচক সংকেত পাওয়া না গেলে আর সময় ব্যয় করা হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার আগে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি যুদ্ধ থামিয়ে দেবেন।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রত্যাশা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আলোচনা খুব কঠিন হয়ে গেছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছাতে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। নিজেদের স্বার্থ নিশ্চিত ও সংলাপে অংশ নিতে আমরা প্রস্তুত।’
এই মন্তব্যের সময়ও ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা চলছিল। শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, রাশিয়া একাধিক মিসাইল হামলা চালিয়েছে, যেখানে অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন।
খনিজ চুক্তিতে আগ্রহ
রুবিওর সতর্কবার্তা এমন এক সময় এলো, যখন ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র একটি খনিজসম্পদ বিষয়ক চুক্তির প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে প্রকাশ্য বাকবিতণ্ডায় আগের বৈঠকটি ব্যর্থ হওয়ার পর এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার দুই দেশ একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। যার মাধ্যমে ইউক্রেনের পুনর্গঠনে একটি বিনিয়োগ তহবিল গঠনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ইউক্রেন সরকারের প্রকাশিত স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, চুক্তিটি ২৬ এপ্রিলের মধ্যে চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে কাজ চলছে।
তবে চুক্তির বিস্তারিত এখনো স্পষ্ট নয়। কিছু গোপন সূত্র জানিয়েছে, কেবল খনিজ সম্পদ নয়, ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো ও তেল-গ্যাস নিয়ন্ত্রণও চুক্তির আওতায় আসছে।
ইউক্রেনীয় আলোচকরা ট্রাম্পের দাবি প্রত্যাখ্যান করতে চেয়েছিলেন যে, যৌথ বিনিয়োগ তহবিলের মাধ্যমে পূর্ববর্তী সামরিক সহায়তার মূল্য পরিশোধ করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সম্ভবত সেই যুক্তি মেনে নিয়েছেন যাতে এই তহবিল যুদ্ধোত্তর দেশ পুনর্গঠনে সহায়ক হয়।
তাতে বলা হয়েছে, ‘আমেরিকান জনগণ একটি মুক্ত, স্বাধীন ও নিরাপদ ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়ে বিনিয়োগ করতে চায়।’
জেলেনস্কি এই চুক্তিকে যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পাওয়ার একটি সুযোগ হিসেবে দেখছিলেন। তিনি গত মাসে ইউরোপীয় নেতাদের বলেন, ‘নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ছাড়া যুদ্ধবিরতি ইউক্রেনের জন্য বিপজ্জনক।’
তবে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে কোনো নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেয়নি। হোয়াইট হাউসের মতে, মার্কিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপস্থিতিই রাশিয়াকে নতুন করে আগ্রাসন থেকে বিরত রাখতে যথেষ্ট। কিন্তু ২০২২ সালে রাশিয়ার আগ্রাসন এই যুক্তিকে ভুল প্রমাণ করেছে।
চুক্তি চূড়ান্তে জোর প্রস্তুতি
ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া স্বিরিডেনকো এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে জানিয়েছেন, তিনি ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট অনলাইন বৈঠকে পৃথকভাবে চুক্তিপত্রে সই করেছেন।
স্বিরিডেনকো লিখেছেন, ‘এখনো অনেক কাজ বাকি। তবে কাজের ইতিবাচক অগ্রগতি ও গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো দেখে মনে হচ্ছে এই চুক্তি উভয় দেশের জন্যই খুবই লাভজনক হবে।’
বেসেন্ট বলেন, চুক্তির চূড়ান্ত বিষয়গুলো এখনো ঠিক করা হচ্ছে, তবে এটি পূর্ববর্তী আলোচনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ট্রাম্প ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ‘আমাদের একটি খনিজসম্পদ চুক্তি আছে, যেটি সম্ভবত (পরবর্তী) বৃহস্পতিবার স্বাক্ষরিত হবে। আশা করি, ওরা এই চুক্তির প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে। দেখা যাক কী হয়।’
ইউক্রেনের পার্লামেন্টের ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংহতি কমিটির চেয়ারপার্সন ও এমপি ইভান্না ক্লিমপুশ-সিনসাদজে বিবিসিকে জানান, ইউক্রেনের পার্লামেন্ট এই চুক্তিতে ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত’ নেবে।
তিনি বলেন, ‘আশা করছি, যথেষ্ট যুক্তি-তথ্য থাকবে যাতে চুক্তিটি যদি স্বাক্ষরিত হয় ও অনুমোদিত হয়, তাহলে তা আমাদের দেশ ও জনগণের স্বার্থেই হবে।’
যুদ্ধবিরতির ওপর চাপ বাড়ছে
এই স্মারকলিপি প্রকাশের সময়, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষিত ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলার ওপর ৩০ দিনের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়েছে।
ক্রেমলিন মুখপাত্র পেসকভ বলেন, পুতিন এখনো নতুন করে কোনো নির্দেশনা দেননি।
বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা প্যারিসে মার্কো রুবিও ও ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা যুদ্ধ শেষ করার উপায় নিয়ে আলোচনা হয়।
সিবিহা বলেন, ‘ন্যায্য ও টেকসই শান্তি নিশ্চিত করতে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি চেষ্টা চলছে- যেখানে ইউক্রেনসহ সকল পক্ষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।’
ওএফ