গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যায় সক্রিয়ভাবে জড়িত যুক্তরাজ্য

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪১

ছবি : সংগৃহীত
ব্রিটিশ সরকার গাজায় সরাসরি সহিংসতা চালাচ্ছে না তবে অস্ত্রের লাইসেন্সের বৈধতা দেওয়ার মাধ্যমেই শুধু নয়, ইসরায়েলের সাথে বৃহত্তর ও গভীর সামরিক সহযোগিতার মাধ্যমেও প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছে বলে এক গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) ব্রিটিশ ফিলিস্তিনি কমিটি (বিপিসি) কর্তৃক প্রকাশিত এই গবেষণায়, আন্তর্জাতিক মানবিক ও মানবাধিকার আইনের 'গুরুতর লঙ্ঘন' সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের আইনি বাধ্যবাধকতার প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের সাথে ব্রিটিশ সামরিক সহযোগিতার গভীরতা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সি।
প্রতিবেদনে অনুযায়ী, গবেষণায় বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য গণহত্যা প্রতিরোধের দায়িত্বসহ আন্তর্জাতিক আইন সমুন্নত রাখতে তার তৃতীয় পক্ষের দায়িত্ব পালনে কেবল ব্যর্থই হয়নি, সেইসাথে গত ১৫ মাস ধরে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছে।
দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলের গুরুতর অবৈধতার মুখে বিস্তৃত আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা থেকে উদ্ভূত ইসরায়েলের সাথে সামরিক সহযোগিতা এবং বাণিজ্য স্থগিত করার দায়িত্ব যুক্তরাজ্যের।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘গণহত্যা ঠেকাতে এবং এ ধরনের কাজ করার জন্য দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিজের এখতিয়ারের মধ্যে এবং যেখানে সম্ভব আন্তর্জাতিকভাবে বিচারের মুখোমুখি করতে যুক্তরাজ্য আইনগতভাবে বাধ্য।’
যুক্তরাজ্যের ভূমিকা সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলে সরাসরি রপ্তানি ছাড়াও ব্রিটেনের তৈরি এফ-৩৫ যন্ত্রাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য অংশীদার দেশগুলোতে সংযোজনের জন্য প্রেরণ করা হয় যা ইসরায়েল পেতে পারে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ রপ্তানির এই সংমিশ্রণের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে এফ-৩৫ যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করেছে।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করেছিল যে, তারা একটি পর্যালোচনার পরে ইসরায়েলে ৩৫০টি অস্ত্র রপ্তানির লাইসেন্সের মধ্যে ৩০টি স্থগিত করছে। সেই সাথে সতর্ক করে দিয়েছিল যে, ইসরায়েলে যুক্তরাজ্যের কিছু অস্ত্র রপ্তানি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন করতে বা সহায়তা করতে ব্যবহৃত হতে পারে এমন একটি স্পষ্ট ঝুঁকি রয়েছে।
এই ৩০টি লাইসেন্সের আওতায় সামরিক বিমান, হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কর্মসূচির জন্য যুক্তরাজ্যের উপাদান বাদ দিয়ে স্থল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার উপাদান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অস্ত্র রপ্তানি ও যন্ত্রাংশ রপ্তানির পাশাপাশি গবেষণায় ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের বিষয়টিও উল্লেখ করে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের হামলার জন্য এগুলো 'মৌলিক সম্পদ'।
বিশেষ করে সাইপ্রাসে একটি ব্রিটিশ ঘাঁটি ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলকে অস্ত্র, কর্মী ও গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহের জন্য ব্যবহার করছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি।
প্রতিবেদনে বিপিসি ইসরাইলের সামরিক তৎপরতা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, দ্বিপক্ষীয় অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং প্রতিবেদনে বর্ণিত সব ধরনের সামরিক সহায়তার বিধান বন্ধ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলার জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ ও যুক্তরাজ্য-ইসরায়েল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য ২০৩০ সালের রোডম্যাপ স্থগিত এবং অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দক্ষিণ আফ্রিকার উপস্থাপনকে সমর্থন করার এবং যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) কর্তৃক গ্রেপ্তার ও বিচারের জন্য চাপ দেওয়ার জন্যও যুক্তরাজ্য সরকারকে সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাজ্য যদি এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নিন্দা, নিষেধাজ্ঞা এবং স্বতন্ত্র রাজনীতিবিদ ও কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনাসহ যথাযথ আইনি পরিণতির মুখোমুখি হওয়া উচিত।’
উল্লেখ্য, গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় ৪৭ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
অবিরাম বোমা বর্ষণ গাজার বেশিরভাগ জনগণকে বাস্তুচ্যুত করেছে, খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতি সৃষ্টি করেছে এবং উপত্যকাটির বেশিরভাগ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
এসবি