
পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ মহামানব হলেন হজরত মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যার জীবন ছিল অজস্র গুণাবলির এক রূপকথা। যা ছিল মূলত আলোকিত জীবনের দিশারি। সফলতার উত্তম পাথেয়। তার উত্তম গুণাবলি শুধু মুমিনগণের নয়; বরং সকলেরই প্রিয়। নিচে তার কিছু উত্তম গুণাবলি তুলে ধরা হলো:
ধৈর্য
নবীজির ধৈর্যে ছিল গভীরতা। সুবিশাল পাহাড়ের ন্যায় ছিল তার ধীরতা। কত যে যাতনার সম্মুখীন হয়েছেন। তবুও ধৈর্যকে সাথে রেখেছেন নবীজি। দুঃখ-দুর্দশায় তার চেহারায় ছিল না কোনো উৎকণ্ঠা বা মলিনতা। হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন পাহাড়সম বেদনা। কাফেরদের অসহনীয় নিপীড়নের পরও লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি তিনি। তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই ছিল ধৈর্যের এক অমর কাব্য। তিনি কল্যাণের দিকে আহ্বান করলেও ঈমান আনত না অনেকেই। তারপরও ধৈর্যপথে অবিচল থাকতেন। নবীজির ধৈর্য, স্থিতিশীলতার কথা কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি হয়ত এ দুঃখে নিজেকে নিঃশেষ করে দেবে যে, তারা মুমিন হচ্ছে না।’ (সুরা: শুআরা, আয়াত : ৩)
দয়া ও সহানুভূতি
নবীজি ছিলেন দয়ার এক অমর প্রতীক ৷ মানবতার এক জাগ্রত সৈনিক। তার হৃদয় ছিল কোমল এবং স্নেহময়। তিনি ছিলেন দয়াপরবশ মহান মানব। নিপীড়িত মানুষের একমাত্র সঙ্গী। অসহায়দের আশ্রয়দাতা। মানবকূলের প্রতি অনুকম্পা তাঁর জীবনের বড় লক্ষ্য ছিল। এজন্য নবীজির জীবন সহানুভূতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। স্বয়ং কোরআনে নবীজির এ গুণের প্রশংসা করে বলা হয়েছে, ‘আমি আপনাকে জগতবাসীর জন্য একমাত্র রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সুরাআম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)
সত্যনিষ্ঠা
এটি নবীজির একটি বিশেষ গুণ। শিশুকাল থেকেই তিনি ছিলেন সত্যপ্রিয়। তার প্রতিটি কথা ছিল সত্যের অটুট চিহ্ন। মক্কার প্রতিটি মানুষের কাছে তিনি ছিলেন বিশ্বস্ত। তাই তো তিনি সবার প্রিয় ওঠেন রাতারাতি। এবং ভূষিত হোন আল-আমিন উপাধিতে। এই অসীম সত্যনিষ্ঠা-ই ছিল নবীজির জীবনের শোভাবর্ধক। হাদিসের বাণী এ বিষয়ের প্রমাণ করে, তৎকালীন বাদশাহ হিরাকিল আবু সুফিয়ান (রা.)-কে বললেন, (আবু সুফিয়ান (রা.) তখন অমুসলিম ছিলেন) আচ্ছা তোমরা কি কখনো মোহাম্মদকে মিথ্যায় অভিযুক্ত করেছ? আবু সুফিয়ান উত্তরে বললেন, না (বুখারি, হাদিস : ৭)
ক্ষমা
ক্ষমা করা ইসলামের একটি সৌন্দর্য। এ গুণটি প্রিয় নবীজি (সা.)-এর শিক্ষা। তাঁর মহান চরিত্রের নীরব পরিচায়ক। তিনি প্রতিটি অপরাধ ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেন। শত্রুরা কত না আঘাত দিত তাকে। তবুও তাদের অপরাধ মার্জনা করতেন তিনি। তাই তাঁর এ মহত্ গুণ প্রশংসনীয় ছিল সকলের কাছে। হাদিসের আলোকে জানা যায়, ক্ষমা বিজয়ের দিন শত অপরাধীদের এ বলে ক্ষমা করে দিয়েছেন যে, ‘আজ তোমাদের ওপর কোনো অভিযোগ নেই।’ (ফিকহুস-সিরাহ : ৩৮২)
ন্যায়পরায়ণতা
নবীজির ন্যায়পরায়ণতা এক সোনালী দৃষ্টান্ত। যুগযুগান্তর যা মানুষের পথপ্রদর্শক হয়ে রয়েছে। নবীজির পুরো সংগ্রামী জীবন ন্যায়ের কথা বলতো। তিনি কখনো স্বজনপ্রীতি করতেন না। তাই তো তার বিচারকার্য ছিল নিরপেক্ষ। এর প্রমাণ পাওয়া যায় হাদিসের বাণীতে, একবার এক নারীর অপরাধ মার্জনার জন্য তার সম্প্রদায় পৌঁছে নবীজির কাছে। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আল্লাহর কসম, মোহাম্মদের কন্যা ফাতিমাও যদি চুরি করে, তবে অবশ্যই মোহাম্মদ তার হাত কেটে দেবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৭৮৮)
বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়ানো
নবীজির একটি মহৎ গুণ এটি। তিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উৎসর্গ করেন পরোপকারে। কারও জীবনে দুর্দশা দেখা দিলে পাশে দাঁড়াতেন তিনি; এমনকি নিজ দুশমন বিপদে পড়লেও। তাইতো নবীজির এ শ্রেষ্ঠগুণে আবিভূত হয়ে যেত মক্কার কাফেররাও। হাদিসের ভাষ্যে পাওয়া যায়, একবার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ঘরে ফেরেন তিনি। তখন স্ত্রী খাদিজা (রা.) তাকে বলেন, ‘শপথ আল্লাহর, তিনি কখনো আপনাকে লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করেন। অসহায়-দুস্থদের দায়িত্ব বহন করেন। নিঃস্বকে সহযোগিতা করেন। মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং হক পথের দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৩) নবীজির এ সকল পুণ্যগুণ পৃথিবীজুড়ে প্রেরণার উৎস। সকল মানুষের জন্য জীবনপ্রদীপ তুল্য। যার অনুকরণ কল্যাণের দিকে আহ্বান জানায়। এবং উপহার দেয় সুন্দর একটি জীবন ।
লেখক : শিক্ষার্থী, লেখক ও প্রাবন্ধিক
- বাংলাদেশের খবরের ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠান এই মেইলে- bkislamic247@gmail.com
ডিআর/বিএইচ