-67dfc0d076a51.jpg)
সমকালীন বিজ্ঞ ফুকাহায়ে কেরাম বৈধ প্রয়োজন ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় চ্যানেল ওপেন করতে নিরুৎসাহিত করেন। তবে কেউ যদি বৈধ প্রয়োজনে চ্যানেল ওপেন করতে চায়, তাহলে তার জন্য নির্দেশনা হলো, প্রাথমিকভাবে মনিটাইজেশন বন্ধ করে রাখবে। যেন কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত না হয়। এরপর নির্দিষ্ট পরিমাণ ভিডিও এবং ওয়াচ টাইম হয়ে গেলে যখন ইউটিউব কর্তৃপক্ষ নিজ থেকেই বিজ্ঞাপন দেখানো শুরু করবে, তখন যথাসম্ভব ক্যাটাগরি ও ফিল্টারিং সিস্টেম চালু করে মনিটাইজেশনের বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এসব প্রক্রিয়া অবলম্বনের পর যদি শরিয়াহ পরিপন্থী কোনো বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়, তাহলে সেখানে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এর দায় ইউটিউবারের ওপর আসবে না। ইনশাআল্লাহ।
তবে মনিটাইজেশন চালু করে এর মাধ্যমে উপার্জন করা নিরাপদ নয়। কারণ, অর্থ উপার্জন বৈধ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন-
১. ভিডিও কনটেন্ট শরিয়াহসম্মত হওয়া। সুতরাং ভিডিওতে যদি নাচ, গান, বেগানা নারী বা অশ্লীল ছবি থাকে, কিংবা হারাম পণ্যের কনটেন্ট হয়ে থাকে, তাহলে এই ভিডিওর মাধ্যমে উপার্জন করা বৈধ হবে না।
২. প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনে শরিয়ত নিষিদ্ধ কোনো উপাদান না থাকা। সুতরাং বিজ্ঞাপনে যদি হারাম পণ্যের প্রমোট করা হয়, যেমন অ্যালকোহল, জুয়া, বেটিং বা শরিয়ত নিষিদ্ধ কোনো জিনিসের প্রমোট করা হলো, অথবা বিজ্ঞাপনে নাচ, গান, বেগানা নারী বা অশ্লীল ছবি থাকে, তাহলেও ওই বিজ্ঞাপন থেকে উপার্জন করা বৈধ হবে না।
৩. বিজ্ঞাপনের চিত্র শরিয়ত পরিপন্থী না হওয়া। যেমন- বেগানা নারীর ছবি থাকা বা শালীনতার পরিপন্থী কোনো ছবি থাকা। জীবন্ত কোনো প্রাণীর ছবি থাকা। ইত্যাদি। এমন কোনো চিত্র থাকলেও ওই বিজ্ঞাপন থেকে উপার্জন বৈধ হবে না।
৪. বিজ্ঞাপন, তার ভাষা ও উপস্থাপনায় কোনো ধরনের গারার বা প্রতারণা না থাকা।
৫. শরীয়ত পরিপন্থী উপাদান প্রদর্শনে ইউটিউবারের সম্মতি না থাকা।
৬. বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য শরিয়াহ নিষিদ্ধ কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ না হওয়া।
৭. যদি কনটেন্টটি অন্যজনের হয়, তাহলে তার অনুমতি ছাড়া প্রকাশ না করা।
সাধারণত এসব শর্তাবলী রক্ষা করা ভিডিওদাতার পক্ষে সম্ভব হয় না। যেমন, কেউ যদি রিলিজিয়াস ক্যাটাগরি নির্বাচন করে, তাহলে সেখানে ইসলাম ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মের বিজ্ঞাপনও প্রদর্শন করা হয়ে থাকে। এর বাস্তবিক দৃষ্টান্ত পাওয়া গেছে।
এমনিভাবে কেউ হালাল ক্যাটাগরির বিজ্ঞাপন নির্বাচন করলো, সেক্ষেত্রে দেখা গেছে- ওই চিত্র শরিয়ত সম্মত নয় কিংবা তাতে মিউজিক অ্যাড করে দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ প্রশাসন, দেশ, অবস্থান এবং সার্চের (অনুসন্ধান) ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রমোট করে থাকে। সেজন্য দেখা যায়, একই ভিডিওতে ইউরোপে এক রকম বিজ্ঞাপন দেখাবে। বাংলাদেশে দেখাবে ভিন্ন রকম বিজ্ঞাপন। এমনিভাবে একই এলাকায় একজনকে দেখাবে এক রকম বিজ্ঞাপন। আরেকজনকে দেখাবে ভিন্ন রকম বিজ্ঞাপন। যে ব্যক্তি যে বিষয়ে বেশি সার্চ করে, তাকে ওই বিষয় সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন বেশি দেখাবে। এভাবে নানা পর্যায়ে শরিয়ত নিষিদ্ধ দিক এসেই যায়। সেজন্য এই ধরনের উপার্জন নিরাপদ নয়। তাই মনিটাইজেশনের মাধ্যমে উপার্জন থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
মোটকথা, ব্যাপকভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার মনিটাইজেশন থেকে উপার্জন করা যেমন হালাল নয়, তেমনি সব উপার্জন হারামও নয়। হালাল বিজ্ঞাপন থেকে যতটুকু আয় হবে, ততটুকু হালাল হবে। আর এই বিষয়টি যেহেতু সহজে নিরূপণ করা সম্ভব নয়, তাই সাধারণভাবে সোশ্যাল মিডিয়া মনিটাইজেশন থেকে ইনকাম করা নিরাপদ নয়। সেজন্য মনিটাইজেশনের মাধ্যমে যে অর্থ উপার্জিত হবে, তা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরিব-মিসকিনকে সদকা করে দেবে।
- বাংলাদেশের খবরের ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠান এই মেইলে- bkislamic247@gmail.com
লেখক : পরিচালক, নদওয়াতুল হানাফিয়্যাহ