Logo

জাতীয়

‘আ.লীগ পুনবার্সন’ নিয়ে হাসনাতের স্ট্যাটাসে রাজনীতিতে উত্তাপ

নুর মোহাম্মদ মিঠু

নুর মোহাম্মদ মিঠু

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ১৫:২৩

‘আ.লীগ পুনবার্সন’ নিয়ে হাসনাতের স্ট্যাটাসে রাজনীতিতে উত্তাপ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি এবং জুলাই-আগস্টে গণহত্যার বিচারের দাবিতে দেশ ‘উত্তাল’ হয়ে উঠেছে। এতদিন বিষয়টি আলোচনার পর্যায়ে থাকলেও এবার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাসহ গণহত্যার বিচারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন শুরু হয়েছে। শনিবার (২২ মার্চ) বিকেল ৩টায় রাজপথে নামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

গত ১১ মার্চ জাতীয় নাগরিক কমিটির (দক্ষিণাঞ্চল) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ক্যান্টনমেন্টে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে আসন সমঝোতার শর্তে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বলে তিনি দাবি করেন। ২০ মার্চ রাতে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বিষয়টি জানান হাসনাত। এরপর থেকে দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এনসিপি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে দেশব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

শুক্রবার (২১ মার্চ) এ নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা এত সহজ নয়। যে দল দেশের জন্ম দিয়েছে, সে দলকে কীভাবে নিষিদ্ধ করবে তারা? যে দলের সমর্থকরা এখনো সক্রিয়, তারা হারিয়ে যাবে না। বরং যারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা বলছে, তারাই হারিয়ে যাবে।’

এদিকে, হাসনাতের স্ট্যাটাসে সেনাবাহিনীর প্রস্তাবের বিষয়টি জানাজানি হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাময়িকভাবে ‘উজ্জীবিত’ হয়ে ওঠেন। শুক্রবার রাতে ইফতারের পর বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। তবে মিছিল থেকে যুব মহিলা লীগের এক নেত্রীসহ তিনজনকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করা হয় বলে জানা গেছে।

গত ৫ আগস্টের পর পলাতক থাকা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও হাসনাতের স্ট্যাটাসের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তবে হাসনাতের ক্যান্টনমেন্ট সফর নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান হাসনাতের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ‘তুমি ক্যান্টনমেন্টে কেন গিয়েছিলে? জনগণকে, আমাদেরকে জানিয়ে গিয়েছিলে? যাওয়ার ৯ দিন পরই বা কেন বিষয়টি জানালে? ওইদিনই (১১ মার্চ) কেন প্রকাশ করলে না?’ 

রাশেদ আরও বলেন, ‘নিশ্চয় ভাগবাটোয়ারায় বনিবনা হয়নি দেখেই এখন সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে কথা বলছ।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘যে লোক আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসবেন, তিনি যদি অপরাধ না করেন, তিনি যদি ছাত্রহত্যা না করেন, তিনি যদি কোনো অর্থ লোপাট না করেন, টাকা পাচার না করেন, সেরকম লোক নেতৃত্বে আসলে আওয়ামী লীগ কেন রাজনীতি করতে পারবে না?’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘সাবের হোসেন চৌধুরী কি দুধে ধোয়া তুলসি পাতা? তিনি কি ছাত্রহত্যার সাথে জড়িত নন? তিনি কি হাসিনার ফ্যাসিবাদ কায়েমের সহযোগী নন? তাহলে তার নেতৃত্বে কেন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের কথা বলা হচ্ছে?’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। এর আগে তাদের সকল অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’

তবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিরোধিতা করে বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষে নই। আওয়ামী লীগ একটি দল, যারা দলের ভেতরে বাস করছে তারা খারাপ হতে পারে। আওয়ামী লীগ একটি গাড়ি, তার ড্রাইভার খারাপ হতে পারে, গাড়িটা তো খারাপ না।’

এনসিপি, ইনকিলাব মঞ্চসহ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা নতুন প্ল্যাটফর্মগুলো প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও তাদের দলের মতাদর্শের সাথে একমত নন। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগকে ফিরতে হলে তাদের লাশের ওপর দিয়ে ফিরতে হবে। এ ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই।

শনিবার (২২ মার্চ) বিকেল ৩টায় শাহবাগ জাদুঘরের সামনে ঢাকা মহানগর এনসিপির বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বেলা ১২টায় রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে দেশব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচির শুরু করে ইনকিলাব মঞ্চ।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে দেশব্যাপী গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পরিচালনা করছে নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ। ইতোমধ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেছে দলটি।

এনএমএম/এমজে

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর