
সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে রোববার (৩০ মার্চ) দেশের অন্তত ১৫ জেলার প্রায় ৩০০ গ্রামে আগাম ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। জেলাগুলো হলো- চট্টগ্রাম, কুড়িগ্রাম, শরীয়তপুর, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, সাতক্ষীরা, শেরপুর, টাঙ্গাইল, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, লালমনিরহাট, নোয়াখালী, পটুয়াখালী ও চাঁদপুর।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা দরবার শরীফ ও জেলার প্রায় অর্ধশত গ্রামে রোববার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন হচ্ছে। ১৯২৮ সাল থেকে সাদ্রা দরবার শরীফের পীর সৌদি আরবসহ অন্য আরব দেশগুলোর সাথে মিল রেখে রোজা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদযাপনের প্রথা চালু করেন। জানা যায়, মরহুম পীর মাওলানা ইসহাকের (রহ.) অনুসারী মুসল্লিরা চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একই সাথে ঈদুল ফিতর উদযাপন করেন।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, সমেশপুর, অলিপুর, বলাখাল, মনিহার, প্রতাপুর, বাসারা, ফরিদগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর, কামতা, গল্লাক, ভুলাচোঁ, সোনাচোঁ, উভারামপুর, উটতলি, মুন্সিরহাট, কাইতাড়া, মূলপাড়া, বদরপুর, আইটপাড়া, সুরঙ্গচাইল, বালিথুবা, পাইকপাড়া, নূরপুর, সাচনমেঘ, শোল্লা, হাঁসা, গোবিন্দপুর, মতলব উপজেলার দশানী, মোহনপুর, পাঁচানী এবং কচুয়া ও শাহরাস্তি উপজেলাসহ অর্ধশত গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পটুয়াখালীর ৩৫টি গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ১৯২৮ সাল থেকে এখানকার গ্রামবাসীরা একদিন আগে থেকে রোজা রাখা শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় একদিন আগে তারা ঈদ উদযাপন করেন।
জানা যায়, তারা সবাই হানিফি মাজহাব কাদেরিয়া তরিকা ভক্ত। তাদের বর্তমান পীর চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার হযরত শাহসুফি মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ মমতাজ আলী।
পটুয়াখালীর ৩৫ গ্রামের মধ্যে রয়েছে গলাচিপার সেনের হাওলা, পশুরী বুনিয়া, নিজ হাওলা, কানকুনি পারা, মৌডুবি, বাউফলের মদনপুরা, রাজনগর, বগা, ধাউরাভাঙ্গা, সুরদি, চন্দ্রপাড়া, দ্বিপাশা, শাপলা খালী, কনকদিয়া, আমিরাবাদ, কলাপাড়ার নিশানবাড়িয়া, ইটবাড়ীয়া, শহরের নাঈয়া পট্টি, টিয়াখালী, তেগাছিয়া ও দক্ষিণ দেবপুর।
নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, জেলার পাঁচটি গ্রামের মানুষ পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। সকাল ৯টায় জেলার তিনটি উপজেলার ১০টি মসজিদে একযোগে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে চারটি গ্রামের মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন।
জানা যায়, বড় পীর আবু মুহম্মদ মহিউদ্দীন সৈয়দ আবদুল কাদির জিলানী (রঃ) এর মতাদর্শে অনুপ্রাণিত কাদেরিয়া তরিকার অনুসারী লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হরিণারায়নপুর, বসন্তবাগ ও ফাজিলপুর, রামভল্লবপুর গ্রামের বাসিন্দারা সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে প্রতি বছর একদিন আগে রোজা রাখেন এবং ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করেন। সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে তারা প্রায় ১০০ বছর ধরে ঈদের জামাতের আয়োজন করেন।
নোয়াখালীর সদর উপজেলার নোয়াখালী পৌরসভা, লক্ষ্মীনারায়ণপুর ও হরিণারায়নপুর গ্রাম, কবিরহাট উপজেলার ঘোষবাগ ইউনিয়নের রামভল্লবপুর, বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বসন্তবাগ ও ফাজিলপুর গ্রামে এসব জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে লালমনিরহাটে শতাধিক পরিবার আজ ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে। জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার, সুন্দ্রহবী, কাকিনা, চাপারহাট, চন্দ্রপুর, আমিনগঞ্জ ও মুন্সীপাড়া গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবারের মুসল্লিরা আজ ঈদের জামাতে অংশ নেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, মাওলানা ইসহাকের (রহ.) অনুসারীরা মক্কা ও মদিনার সাথে সঙ্গতি রেখে ঈদসহ সব ধর্মীয় উৎসব পালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় লক্ষ্মীপুর জেলার ১১টি গ্রামে রোববার ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জেলার রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও, জয়পুরা, বিঘা, হোটাটিয়া, শরশোই, কাঞ্চনপুর ও রায়পুর উপজেলার কলাকোপা ও সদর উপজেলার বশিকপুরসহ ১১টি গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক মুসল্লি ঈদুল ফিতর উদযাপন করেন। এসব গ্রামের মুসল্লিরা গত ৪১ বছর যাবত সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করে আসছেন।
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর দরবার পীরের মুরিদ ও ভোলা জেলার দায়িত্বে নিয়োজিত খলিফা মজনু মিয়ার অনুসারী প্রায় ছয় হাজার পরিবার ভোলায় ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন।
ভোলা সংবাদদাতা জানান, ভোলার পাঁচ উপজেলার ১৪টি গ্রামে আজ ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুরেশ্বর পীরের মুরিদ ছাড়াও ভোলাবাসী চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এবং ভান্ডারি শরিফ পীরের মুরিদের পরিবারের সদস্যরাও শতবছর ধরে সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে একদিন আগেই রোজা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা পালন করে আসছেন।
টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার শশীনাড়া গ্রামের ৪০টি পরিবার ঈদ উদযাপন করছে। উপজেলার লাউহাটী ইউনিয়নের শশীনাড়া গ্রামের কিছু মুসুল্লি ২০১২ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে মিল রেখে রোজা ও ঈদ উদযাপন করেন।
বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর সাথে মিল রেখে সাতক্ষীরার অন্তত ২০টি গ্রামে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৮টায় সদর উপজেলার বাউখোলা বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ভাড়ুখালি আহলে সুন্নাহ আল জামাত জামে মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া তালা উপজেলার জেঠুয়া, ইসলামকাঠি, শ্যামনগর উপজেলার গোয়ালচত্বরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে একই সময়ে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। গত এক যুগ ধরে তারা সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদের নামাজ আদায় করে আসছেন।
দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুর জেলায় ২০০৭ সাল থেকে সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সদর উপজেলাসহ ৭টি উপজেলার কয়েকটি গ্রামে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। স্থানীয় মুসল্লিদের দাবি প্রতি বছর একদিন আগে অনুষ্ঠিত এই ঈদের জামাতে মুসল্লিদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।
শেরপুরে নারী-পুরুষ একসাথে ঈদের জামাত আদায় করেছেন। শেরপুরের চারটি উপজেলার ৭টি গ্রামের কয়েক হাজার মুসল্লি ঈদুল ফিতরের নামায আদায় করেন। প্রতিটি জামায়াতে শতাধিক মুসল্লি অংশগ্রহণের পাশাপাশি নারী মুসুল্লি পর্দার আড়ালে একই জামাতে অংশ নেন।
সাতক্ষীরার অন্তত ২০টি গ্রামে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৮টায় সদর উপজেলার বাউখোলা বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ভাড়ুখালি আহলে সুন্নাহ আল জামাত জামে মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া তালা উপজেলার জেঠুয়া, ইসলামকাঠি, শ্যামনগর উপজেলার গোয়ালচত্বরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে একই সময়ে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। গত এক যুগ ধরে তারা সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদের নামাজ আদায় করে আসছেন।
নারায়নগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, জেলার সোনারগাঁও উপজেলার সনমান্দী ইউনিয়নের ২৩টি গ্রামের ২৩টি মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোনারগাঁওয়ে আহালে হাদিসের ২৩টি মসজিদ রয়েছে। এই মসজিদের মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করেন। ২০১৪ সাল থেকে তারা সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার ১৩টি গ্রামে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর সংবাদদাতা। এই ১৩টি গ্রামের কিছু সংখ্যক মানুষ মধ্যপ্রাচ্যের সাথে মিল রেখে একদিন আগে পবিত্র রোজা ও ঈদ পালন করেন। ১৩ গ্রামের এই মুসল্লিরা চট্টগ্রামের মির্জাখিল শরীফের মুরিদান।
গত ২৪ বছর ধরে ঝিনাইদহের চারটি স্থানে সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় জেলার হরিণাকুন্ডু পৌরসভার বলফিল্ডের সামনে ভালকি, নিত্যনন্দনপুর, কালীগঞ্জের বারোবাজার ও সদর উপজেলার একটি অংশের মুসল্লিরা পৃথকভাবে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
রংপুরের ১২০ পরিবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে। স্থানীয়রা জানান, ১৯৯৪ সালে বাগপুর পূর্ব মৌলভীপাড়া গ্রামের মাওলানা আব্দুর রশীদ বাদশা ঈমাম হয়ে ২০ থেকে ৪০ জন মুসল্লিকে সাথে নিয়ে সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে রোজা এবং ঈদ উদযাপন শুরু করেন। তখন থেকেই এ নিয়ম চলে আসছে। ২০২২ সালে মাওলানা আব্দুর রশীদ বাদশার মৃত্যুর পর তার বড় পুত্র মাওলানা আব্দুল বাতেন বাবার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে নিজে ইমাম হয়ে ১২০টি পরিবারকে সাথে নিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
এ ছাড়াও চট্টগ্রামের ৫০টি গ্রাম, কুড়িগ্রামের কয়েকটি গ্রাম এবং শরীয়তপুরের ৩০টি গ্রামে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।