-67bc62e483378.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
শুধু রাজধানী ঢাকাই নয়, গোটা দেশের মানুষের মধ্যেই যেন বিরাজ করছে চাপা আতঙ্ক। কোথাও ছিনতাই, কোথাও ধর্ষণ, কোথাও ডাকাতি আবার চুরি-চাঁদাবাজিও যেন এখন মামুলি বিষয়।
শুধু তাই নয়-সরকারি স্থাপনাও আজ নিরাপদ নয়। চলমান সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ যতোটা না উদ্বিগ্ন, দু-চারটি বিচ্ছিন্ন ছিনতাইয়ের ঘটনা ছাড়া সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা বলে তার চেয়েও বেশি তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন খোদ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অথচ ইতোমধ্যেই তার পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠছে রাজপথ।
পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের প্রায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শুরু হয়েছে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-মানববন্ধন কর্মসূচি। যে কর্মসূচি গড়াতে যাচ্ছে রাজপথে। দেশের চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, ছিনতাই ও ধর্ষণের লাগাতার ঘটনায় দ্রুত অপরাধীদের দৃশ্যমান শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে ধর্ষণ, ছিনতাই বিরোধী নতুন প্লাটফর্মের মাধ্যমে রাজপথে নামতে পারে শিক্ষার্থীরা।
রাজধানীর ভিকারুননিসা নুন স্কুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি ও বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আজ। তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ ও ধর্ষণবিরোধী ট্রাইবুনাল গঠনসহ নয়টি দাবি জানিয়েছেন। দাবি আদায়ের ব্যত্যয় ঘটলেই বড় আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
গতকাল (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর বনশ্রী, মোহাম্মদপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনার পরই মূলত ফুঁসে উঠেছে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা। এর আগে মোহাম্মদপুর ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক প্রকাশ্য ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা বর্তমান অরাজনৈতিক, নিরপেক্ষ সরকার ও প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে ছিল সাধারণ মানুষ। জনগণের সেই প্রত্যাশা পুরাণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার-এমনটাই বলছেন তারা।
সাধারণ মানুষের ভাষ্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতায় ধর্ষণ, ছিনতাই, চুরি, চাঁদাবাজি বেড়েছে দেশে। তাদের ব্যর্থতার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। একই সময়ে ধর্ষণের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীরা।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে রোববার মধ্যরাতে রাজধানীর বারিধারা ডিওএইচএসের নিজ বাসায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার থেকে দিনে বা রাতে যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজন হবে, সেখানেই তারা যাবে এবং তারা সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়বে। যেখানেই ঘটনা ঘটবে সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আজ সন্ধ্যা থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম টের পাওয়া যাবে।
যদিও তিনি দাবি করেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্যাটিসফ্যাক্টরি (সন্তোষজনক)।
তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে বলে স্বীকার করে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। মাঝে মাঝে ভালো হয়েছে, মাঝে মাঝে বেশি খারাপ হয়েছে। এর কারণ অন্তর্বর্তী সরকার ধ্বংসপ্রাপ্ত পুলিশ, বিচার বিভাগ ও প্রশাসন নিয়ে কাজ করছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে দলগত ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজির ঘটনা বহু আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। যেখানে ধর্ষণের মতো আমলযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত অপরাধীও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে তখন অন্য অপরাধগুলো মাথা ছাড়া দিয়ে উঠবেই। এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হওয়া উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
এদিকে অপারেশন ডেভিল হান্টেও মিলছে না সুফল। একদিকে ডেভিল ধরায় ব্যস্ত সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অন্যদিকে দেদারসে ধর্ষণ, ছিনতাইসহ বড় ধরনের ঘটনা ঘটিয়েই যাচ্ছে অপরাধীরা।
এসব ঘটনায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার গুঞ্জনও তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের আওয়াজ ওঠায় রাজনৈতিক দলগুলো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করবে। কারণ রাজনৈতিক নেতারা ভালো করেই জানেন স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে গেলে জাতীয় নির্বাচন অন্তত ৬-৭ মাস পিছিয়ে যাবে। যে কারণে তারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার করার চেষ্টা চালাতে পারে।
এমএইচএস