Logo

মতামত

মনুষ্যত্বের মৃত্যু যেন না হয়

Icon

আসিফ আল মাহমুদ

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১৯:৩২

মনুষ্যত্বের মৃত্যু যেন না হয়

মনুষ্যত্ব হলো মানুষের সবচেয়ে বড় গুণ। এটি মানুষের মনস্তাত্ত্বিক গুণাবলি, যা তাকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করে। ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা, পরোপকারিতা, সততা, বিনয়, নম্রতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সহানুভূতির মতো মানবিক গুণাবলিই মনুষ্যত্বের পরিচয়। কিন্তু বর্তমান সমাজে এই গুণাবলিগুলো ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা দিন দিন স্বার্থবাদী, উগ্র, অসহিষ্ণু ও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছি। পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন কিংবা অনলাইন মাধ্যমগুলোতে প্রতিদিন গণপিটুনি, খুন-হত্যা, যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের মতো নৃশংস ঘটনা চোখে পড়ে। এগুলো আমাদের সমাজে মনুষ্যত্বের মৃত্যুরই ইঙ্গিত দেয়।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘আমি মানুষের মৃত্যু দেখে ভয় পাই না, দুঃখ পাই মনুষ্যত্বের মৃত্যু দেখে।’ বর্তমানে আমরা স্বেচ্ছায় নিজেদের মনুষ্যত্বকে হত্যা করছি। অন্যের দুঃখ-কষ্ট-বিপদে এগিয়ে না গিয়ে, সহযোগিতার হাত না বাড়িয়ে আমরা নির্বিকার থাকি। কখনো মুঠোফোন বের করে ভিডিও ধারণ করতে ব্যস্ত থাকি। বন্যা-দুর্যোগ কবলিত মানুষের সেবার নামে কেউ কেউ সস্তা জনপ্রিয়তার খোঁজ করেন। ত্রাণ-যাকাতের নামে মিডিয়া ও জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। এমনকি সন্তানেরা তাদের বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসার মতো অমানবিক কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করে না।

মনুষ্যত্বের এই অবক্ষয়ের পেছনে বেশ কিছু কারণ দায়ী। প্রথমত, শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হারিয়ে গেছে। আমরা কেবল সনদমুখী শিক্ষা অর্জন করছি, কিন্তু প্রকৃত গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। পাঠ্যক্রমে নীতি-নৈতিকতার শিক্ষার অভাব রয়েছে। পরিবারগুলোতে নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চা হয় না। দ্বিতীয়ত, আমরা অর্থ ও বিলাসবহুল জীবনযাপনের পেছনে ছুটছি। অর্থের বিনিময়ে মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে অন্যায়, অপরাধ, অবিচার ও দুর্নীতি করতেও আমাদের বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ নেই। তৃতীয়ত, ধর্মভীরুতার অভাব। প্রত্যেক ধর্মই শান্তি, মানবিকতা ও মনুষ্যত্বের বাণী শোনায়, কিন্তু আমরা সেই বাণী অগ্রাহ্য করে চলেছি।

মনুষ্যত্বের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে হলে সমাজের প্রতিটি স্তরে নৈতিকতার চর্চা বাড়াতে হবে। পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নৈতিকতার শিক্ষা জোরদার করতে হবে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রত্যেককে মনুষ্যত্ব পরিপন্থী যেকোনো কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে হবে। লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী তাঁর ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে বলেছেন, শিক্ষার মাধ্যমেই একজন মানুষ জীবসত্তা থেকে মানবসত্তায় উপনীত হয়। তাই শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য ফিরিয়ে আনতে হবে।

মনুষ্যত্বের সংকট আমাদের সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানো অপরিহার্য। দেশের মুষ্টিমেয় মানুষ, যারা এখনো মনুষ্যত্ব বজায় রেখেছেন, তাদের এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের মধ্যে মানবিকতার চর্চা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। তবেই আমরা একটি নিরাপদ ও বসবাসের উপযোগী পৃথিবী গড়ে তুলতে পারব।

  • লেখক: কলামিস্ট, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর