Logo

রাজনীতি

বিএনপিকে ঘিরে ভারতের নতুন কৌশল?

Icon

বিবিসি

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:২৩

বিএনপিকে ঘিরে ভারতের নতুন কৌশল?

দীর্ঘদিন ধরেই এই কথাটা প্রচলিত যে বাংলাদেশে ভারতের ‘সব ডিম শুধু একটি ঝুড়িতেই’ সেই ঝুড়ি হলো আওয়ামী লীগ। এই দলটির সঙ্গেই বরাবর সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী ছিল প্রতিবেশী দেশটি। উল্টো দিকে বিএনপির সঙ্গে সবসময়ই ছিল শীতল সম্পর্ক

এক্ষেত্রে দিল্লির ভাষ্য, বিএনপি-শাসিত আমলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না, তাই আস্থার পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। আর বিএনপি মতে, তারা পররাষ্ট্রনীতিতে আত্মমর্যাদার পক্ষপাতী, তবে ভারতবিরোধী নয়। 

২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি এই সম্পর্ক উষ্ণ করার উদ্যোগ নেয়। কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকায় বিএনপি ভেবেছিল, বিজেপির সঙ্গে তারা নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারবে। কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিত মিললেও সম্পর্ক সেভাবে এগোয়নি। উল্টো মোদি-হাসিনা সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন, বিশেষ করে ২০২৪ সালের আগস্টের ঘটনাবলী, বিএনপি ও ভারতের সম্পর্ক নতুন করে ভাবনার সুযোগ তৈরি করেছে। ভারতের বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি যদি ভারতের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবিতে ইতিবাচক সাড়া দেয়, তাহলে ভারতও সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী হতে পারে।

দিল্লিতে এখন অনেকেই মনে করছেন, পরবর্তী নির্বাচনে বিএনপির জয়ের সম্ভাবনা থাকায়, ভারত হয়তো এখন তাদের ‘সেরা বাজি’ হিসেবে ভাবছে।

যোগাযোগ বন্ধ ছিল না
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস বলেন, বিএনপির সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ কখনো পুরোপুরি বন্ধ ছিল না। তিনি নিজেও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বহুবার বৈঠক করেছেন। ভারতের প্রতি তাদের নীতির ব্যাখ্যা চেয়েছেন।

বিএনপির তরুণ সংসদ সদস্যরাও অতীতে ভারতে সফর করেছেন। যা প্রমাণ করে দুই পক্ষের মাঝে একেবারে বিচ্ছিন্নতা ছিল না। তবুও আস্থার অভাব দুই পক্ষেই স্বীকৃত।

ভারতের অগ্রাধিকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা
বর্তমানে ভারতের অনেক বিজেপি নেতা বাংলাদেশে যে দলের সঙ্গেই সম্পর্ক হোক, সেখানে সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুদের নিরাপত্তাকে প্রধান শর্ত হিসেবে দেখছেন। বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরুক, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক, তবে মৌলবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে।

তবে বাস্তবে বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের ভারতে চলে যাওয়ার বড় কোনো স্রোত দেখা না গেলেও, এই ইস্যু ভারতের রাজনৈতিক আলোচনায় প্রভাব রাখছে।

ভারত-বিরোধী রাজনীতির প্রশ্ন
বহু বছর ধরে ভারতের পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করে বিএনপির রাজনীতির শিকড়ে ভারতবিরোধিতা রয়েছে। যদিও বিএনপি বলছে, তারা সম্মানজনক সম্পর্ক চায়, স্রেফ বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করে না।

ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষক শান্তনু মুখার্জি মনে করেন, ক্ষমতায় এলে বিএনপি আরও বাস্তববাদী হবে। তবে নির্বাচনী প্রচারে ভারতের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষা ব্যবহার যে বাড়তে পারে, তাও তিনি মনে করছেন। খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন ও সরব রাজনীতিতে অংশগ্রহণ পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করতে পারে।

জামায়াত থেকে দূরত্ব : ভারতের জন্য সুযোগ
ভারত যেহেতু জামায়াত ও ইসলামপন্থী রাজনীতির বিরোধী, তাই বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব ভারতকে নতুন করে ভাবতে উৎসাহ দিচ্ছে। রিভা গাঙ্গুলি দাস বলেছেন, জামায়াত ও বিএনপির মতপার্থক্য এখন স্পষ্ট, যা দিল্লি পর্যবেক্ষণ করছে।

ভারতের কাছে এই আলাদা অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অতীতে ২০০১–২০০৬ মেয়াদে আলফাসহ ভারতের বিদ্রোহীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ ভারতের নিরাপত্তার জন্য বড় উদ্বেগের বিষয় ছিল।

নির্বাচনের আগে প্রকাশ্য সমর্থন নয়
বর্তমানে ভারত চায় বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। নির্বাচনের আগে কোনো দলের পক্ষ না নিয়ে, ভারতের লক্ষ্য হচ্ছে পরবর্তী সরকার যেই আসুক, তার সঙ্গে একটি কার্যকর সম্পর্ক গড়ে তোলা। 

বিজেপি এমপি শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন স্বাভাবিকভাবেই সম্পর্ক বেশি ছিল। এখন অভ্যন্তরীণ সংকট ভারত পর্যবেক্ষণ করছে, তবে হস্তক্ষেপ করছে না।

রাজনীতির নতুন বাস্তবতায় বিএনপি ও ভারতের সম্পর্ক পুনঃমূল্যায়নের সময় এসেছে। আস্থা ও নিরাপত্তা ইস্যুতে স্পষ্ট বার্তা দিতে পারলে বিএনপি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার সুযোগ পাবে। তবে ভারতের শর্ত থাকবে—ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্নতা ও অতীতের ভুল পুনরাবৃত্তি না হওয়া। নির্বাচন পরবর্তী বাস্তবতাই নির্ধারণ করবে, এই সম্পর্ক নতুন দিগন্তে পৌঁছাবে কি না।

ওএফ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর