Logo

ধর্ম

ঘোড়ার মাংস খাওয়ার হুকুম

বেলায়েত হুসাইন

বেলায়েত হুসাইন

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫, ১৬:২৬

মানবজাতি সৃষ্টির সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালা তার মধ্যে বেশকিছু চাহিদাও দিয়ে দিয়েছেন। সেগুলোর অন্যতম হলো- পানাহার করা। পানাহার মানুষের একান্ত প্রাকৃতিক প্রয়োজন। তবে মানুষ যা ইচ্ছা তাই খেতে পারে না; বরং আল্লাহ তায়ালা যেসব বস্তু তাদের জন্য হালাল করেছেন, সেগুলোই তাদের খাওয়ার অনুমতি আছে। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে তাদের জন্য কী কী হালাল করা হয়েছে। বলো, যাবতীয় ভালো ও পবিত্র বস্তু তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে...।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৪)

অর্থাৎ প্রতিটি ভালো ও উত্তম বস্তুই ইসলামে স্বাভাবিকভাবে হালাল, যতক্ষণ না নির্দিষ্ট কোনো বস্তুকে হারাম অথবা নিষেধ করা হয়। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে- তাহলে ঘোড়ার মাংস খাওয়ার হুকুম কী? এ বিষয়ে আমরা দেশের বিশিষ্ট তিনজন আলেমের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের একজন ঐতিহ্যবাহী ইসলামি ম্যাগাজিন মাসিক মদিনার বিভাগীয় সম্পাদক ও জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা খালেদুজ্জামান। হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেছেন, ঘোড়ার মাংস খাওয়া স্বাভাবিকভাবে হালাল। তবে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এটিকে মাকরুহে তানজিহি আখ্যা দিয়েছেন। কারণ, যদি ব্যাপকভাবে ঘোড়া খাওয়া হয়, তাহলে যুদ্ধের বাহন হিসেবে ঘোড়ার সংকট তৈরি হবে। তবে তার মতে- বর্তমান পরিস্থিতিতে তা খাওয়া যেতে পারে। 

রাজধানীর গুলিস্তানের পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজীও প্রায় অভিন্ন মত দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, অন্য মাজহাবে ঘোড়ার মাংস খাওয়া জায়েজ হলেও হানাফি মাজহাবে তা মাকরুহ। এজন্য আমাদের উপমহাদেশের মুসলিমদের মধ্যে ঘোড়ার মাংস খাওয়ার প্রচলন নেই। তবে হানাফি অধ্যুষিত এলাকা- বুখারা, সমরকন্দ, উজবেকিস্তান প্রভৃতি অঞ্চলে ঘোড়ার মাংস খাওয়ার ব্যাপক প্রচলন। আমাদের দেশের গরুর মাংসের মতো ওই সব অঞ্চলে ঘোড়ার মাংসের দোকান রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মুফতি সিরাজীর মত হচ্ছে- যেহেতু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ঘোড়ার মাংস একেবারে নিষিদ্ধ না- এজন্য আমাদের দেশের কারো যদি রুচি হয়, তাহলে সে তা খেতে পারে। তবে অবশ্যই এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে যে, আমাদের দেশের পরিবেশ অনুযায়ী ঘোড়ার মাংস খাওয়া উপযোগী কিনা?

তবে ঘোড়ার মাংস খাওয়ার বিষয়টিকে খুব হালকাভাবে নিচ্ছেন না রাজধানীর প্রসিদ্ধ ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়া ঢাকার মুহতামিম মুফতী মামুন আব্দুল্লাহ কাসেমী। তিনি বলেন, ঘোড়ার মাংস খাওয়ার নিষেধাজ্ঞা মূলত যুদ্ধের সরঞ্জাম হিসেবে। আর বর্তমানে যুদ্ধক্ষেত্রে যদিও ব্যাপকভাবে ঘোড়ার ব্যবহার নেই, কিন্তু তা একেবারে বন্ধও হয়ে যায়নি। এখনো পুলিশ কেন্দ্রগুলোতে ঘোড়ার রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় এবং নিয়মিত তার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় সীমান্ত নিরাপত্তা, জননিরাপত্তার কাজে ঘোড়ার ব্যবহার এখনো বিদ্যমান। এজন্যই সামরিক প্যারেড প্রদর্শনে অশ্বারোহীদের অংশগ্রহণ থাকে বেশ কয়েকভাবে বরং পুরো প্যারেডে অশ্বারোহীদের এক্টিভিটিকেই সবচেয়ে আকর্ষণীয় করে প্রদর্শন করা হয়। এতেই বোঝা যায়, সামরিক কাজে ঘোড়ার গুরুত্ব এখনো অপ্রাসঙ্গিক নয়।

একই সঙ্গে হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) বর্ণিত ঘোড়ার মাংস নিষিদ্ধের হাদিসটি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘ঘোড়ার মাংষ খাওয়ার নিষিদ্ধতার মূল সূত্র হচ্ছে এই হাদিস। আর জিহাদের কাজে ব্যবহার হওয়ার বিষয়টি একটি প্রাসঙ্গিক দলিল। এজন্য ইমাম আবু হানিফা (রহ.) দ্ব্যার্থহীনভাবে ঘোড়ার মাংস খাওয়াকে মাকরুহ বলে ব্যাখ্যা করেছেন।’ এজন্য মুফতী কাসেমীর মতে- দেশে ঘোড়ার মাংস খাওয়া, কেনা-বেচা খুবই দুঃখজনক, যা পরিহারযোগ্য।

  • বাংলাদেশের খবরের ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠান এই মেইলে- bkislamic247@gmail.com 

বিএইচ/

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর