পবিত্র কোরআনের ১১৪টি সুরাকে ৩০ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পরিভাষায় যেগুলোকে পারা বলা হয়। মাহে রমজানে বাংলাদেশের খবরের পাঠক-শ্রোতাদের দিনে এক পারা করে তিলাওয়াত উপহার দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ। তিলাওয়াত করেছেন রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত মাদরাসাতুল মারওয়াহর প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম হাফেজ মাওলানা কারী মাঈনুদ্দীন ওয়াদুদ।
সোমবার (১৬ রমজান, ১৭ মার্চ) রইল ১৬তম পারার তিলাওয়াত। আজকের তিলাওয়াতে রয়েছে সুরা কাহফের ৭৫ নম্বর আয়াত থেকে শেষ পর্যন্ত, সুরা ত্বহা ও সুরা মারইয়াম।
সুরা কাহফের সারমর্ম
‘কাহফ’ শব্দের অর্থ গুহা, গর্ত ইত্যাদি। এই সুরার নাম ‘সুরাতুল কাহফ’ রাখার কারণ হলো, এই সুরায় গুহার অধিবাসী এক দল ঈমানদারের বিস্ময়কর কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে।এই ঘটনা আল্লাহর অস্তিত্ব ও মহাশক্তির অন্যতম দলিল।
কোরআনের যে পাঁচটি সুরা ‘আল হামদুলিল্লাহ’ শব্দের মাধ্যমে শুরু হয়েছে, এ সুরা সেগুলোর অন্যতম। ওই সুরাগুলো হলো—সুরা ফাতিহা, আনআম, কাহফ, সাবা ও ফাতির।
সুরা কাহফ আগের সুরার সঙ্গে বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত। এর আগে ছিল সুরা বনি ইসরাঈল। সুরা বনি ইসরাঈল শুরু হয়েছে আল্লাহর তাসবিহ তথা ‘সুবহানাল্লাহ’ শব্দের মাধ্যমে। আর সুরা কাহফ শুরু হয়েছে আল্লাহর তাহমিদ তথা ‘আল হামদুলিল্লাহ’ শব্দের মাধ্যমে। তা ছাড়া সুরা বনি ইসরাঈলের শেষের দিকে কোরআনের সত্যতা ও কোরআন পাঠের পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছিল। সুরা কাহফের সূচনাতেও কোরআন সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। এভাবেই উভয় সুরা পরস্পর সম্পৃক্ত।
সুরা কাহফের গোড়ার দিকে কোরআন সম্পর্কে বলা হয়েছে যে এই কোরআনে কোনো বক্রতা নেই। এর বক্তব্য সুদৃঢ় ও সুস্পষ্ট। কোরআন এসেছে মানুষকে সুসংবাদ দেওয়া ও সতর্ক করার জন্য। এর পরই পৃথিবীর বিভিন্ন সৌন্দর্য ও আশ্চর্য ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলো মহান আল্লাহর মহাশক্তির প্রমাণ বহন করে।
এই সুরায় প্রধানত তিনটি অতি বিস্ময়কর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, যেগুলো কোরআনে বর্ণিত ছোট গল্পগুলোর অন্যতম। সেই ঘটনাগুলো হলো—এক. আসহাবে কাহফ বা গুহা অধিবাসীদের ঘটনা। ঈমান-আকিদা নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে স্বজন ও স্বদেশ ত্যাগ করে অলৌকিক আখ্যান রচনা করেছিলেন কিছু যুবক। অত্যাচারী শাসক ও ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকে দূরে গিয়ে গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা। অমনিতেই ঘুম এসে যায়। এরই মধ্যে ৩০৯ বছর পার হয়ে যায়। পরে মহান আল্লাহ তাঁদের জাগ্রত করেন। বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেন, এভাবেই তিনি কিয়ামতের দিন পুনরুত্থান ঘটাবেন।
দুই. মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর ঘটনা। আল্লাহর নবী হয়েও অন্য মানুষের কাছে শেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে মুসা (আ.)-এর। শেখা ও শেখানোর ক্ষেত্রে ওস্তাদ ও শাগরেদের ভূমিকা কেমন হওয়া দরকার সে সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে এই ঘটনায়।
তিন. জুল কারনাইনের ঘটনা। পৃথিবীর উদয়-অস্তের স্থান ভ্রমণ করেছিলেন তিনি। শাসন করেছিলেন গোটা পৃথিবী। ইয়াজুজ-মাজুজের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য বাঁধও নির্মাণ করেছিলেন তিনি। সেই কিংবদন্তি শাসকের জীবনের কিছু দিক তুলে ধরা হয়েছে এই কাহিনিতে।
এই তিনটি ঘটনার পাশাপাশি আরও কয়েকটি ঘটনার দিকে ইঙ্গিত রয়েছে এই সুরায়। যেমন—এখানে দুই বাগানের মালিকের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, পার্থিব জীবনের উপমা তুলে ধরা হয়েছে, ইবলিস ও আদম (আ.)-এর ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তবে এগুলো কাল্পনিক কাহিনি নয়। এগুলো অতীতের চিরসত্য ও জীবন্ত কাহিনি। ঘটনাগুলো বর্ণনার পাশাপাশি এর শিক্ষণীয় দিকগুলোও তুলে ধরা হয়েছে। বিপদ ও দুর্দশার সময় করণীয় সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঈমানদার হিসেবে বাঁচতে চাইলে কত প্রতিকূলতা পাড়ি দিতে হয় তার কিঞ্চিৎ ধারণা পাওয়া যায় এসব ঘটনায়।
ডিআর/বিএইচ