-67f3bdc79b5a9.jpg)
বিবাহ মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ। স্বাভাবিক জীবনের অনিবার্য একটি প্রয়োজন। একজন মানুষ যখন শিশু হিসেবে ভূমিষ্ঠ হয় তখনই তার মাঝে খাবারের চাহিদা থাকে; বরং মাতৃগর্ভে প্রাণ সঞ্চারের পর থেকেই তার মাঝে খাবারের চাহিদা সৃষ্টি হয়। এ সময় তার মাঝে মানবজীবনের অন্য অনেক সাধারণ চাহিদা থাকে না। সে ভূমিষ্ঠ হয়ে ধীরে ধীরে যখন বড় হতে থাকে তখন পর্যায়ক্রমে তার অনেক প্রয়োজন দেখা দিতে থাকে। যখন সে আরো বড় হয়, পরিণত বয়সে উপনীত হয়, তখন তার বিবাহের প্রয়োজন হয়। ব্যক্তিভেদে মানুষের জীবনে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজন থাকতে পারে, তবে কিছু প্রয়োজন এমন রয়েছে, যা প্রায় প্রতিটি মানুষের মাঝেই বিদ্যমান। বিবাহ তারই একটি।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং একে মানবজাতির প্রতি অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেহেতু সমগ্র জগৎ আল্লাহরই সৃষ্টি, জগতের নিয়ম-নীতি তিনিই তৈরি করেছেন, মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি তাঁরই সৃষ্টি, তাই প্রত্যেক সৃষ্টির মাঝে এমন উপাদান তিনি দান করেছেন, যার মাধ্যমে জগৎটা সুন্দরভাবে পরিচালিত হতে পারে। এ ব্যবস্থা তাঁরই দেওয়া। তাঁরই হিকমত।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্য থেকে এটি একটি যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গীণীকে, যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি লাভ করতে পারো এবং তোমাদের (স্বামী-স্ত্রীর) পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে বহু নিদর্শন রয়েছে, সেইসব লোকের জন্য, যারা চিন্তা-ভাবনা করে।’ (সুরা রূম, আয়াত : ২১)
অন্যত্র তিনি আরও ইরশাদ করেন, ‘তিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর থেকেই তাঁর স্ত্রীকে বানিয়েছেন, যাতে সে তার নিকট প্রশান্তি লাভ করতে পারে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৮৯) বিবাহ ও স্বামী-স্ত্রীর মধুর সম্পর্ক নিয়ে কোরআন হাদিসে আরও অসংখ্য আয়াত ও বর্ণনা এসেছে। কিন্তু এটাও বাস্তবতা যে, কখনো কখনো এই মধুর সম্পর্কও তেতো হয়ে যায় এবং স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজন থেকে পৃথক হয়ে যায়। শরিয়তের পরিভাষায় যেটিকে বলা হয় তালাক।
তালাক অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়। কেউ এই ক্ষমতার অপব্যবহার করলে কিংবা ভুল পন্থায় তা প্রয়োগ করলে যদিও একদিকে তালাক প্রদানকারী গুনাহগার হবে- এ সত্ত্বেও তার দেওয়া তালাক কার্যকর হয়ে যাবে। তাই প্রতিটি বিবেচক স্বামীর দায়িত্ব হলো, তালাকের শব্দ কিংবা এর সমার্থক কোনো শব্দ মুখে উচ্চারণ করা থেকে সতর্কতার সাথে বিরত থাকা। দুষ্টমি করে ও খেলাচ্ছলেও তালাক শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। কারণ, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তিনটি বিষয় এমন আছে, যা স্বাভাবিকভাবে করলেও কার্যকর হয় এবং ঠাট্টাচ্ছলে করলেও কার্যকর হয়— বিয়ে, তালাক এবং তালাকে রাজয়ি (যে তালাক দেওয়ার পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়া যায়)।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১১৮৪)
আর আধুনিক যুগে কেউ যদি ইমেইল কিংবা যেকোনো ম্যাসেজিংয়ের মাধ্যমে স্ত্রীকে তালাক দেয়, তাহলেও তালাক কার্যকর হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে যদি তালাকের ম্যাসেজ ইন্টারনেট কিংবা প্রযুক্তিগত কোনো ঝামেলার কারণে স্ত্রীর কাছে নাও পৌঁছায়, তবুও তালাক কার্যকর হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে পরে স্বামী স্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়ে দেবে। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
-মাওলানা শিব্বির আহমাদ উসমানী রচিত ও মুহাম্মদ মিযানুর রহমান তালুকদার অনূদিত ‘মোবাইল ফোনে বিয়ে ও তালাক’ বই অবলম্বনে
ডিআর/বিএইচ