
পশুত্বের শিকার মাগুরার শিশুটিকে বাঁচানো গেল না
শোকে স্তব্ধ পুরো দেশ
বাংলাদেশের খবর প্রধান প্রতিবেদন করেছে, বাঁচানো গেল না ধর্ষকদের 'পশুত্বের শিকার' মাগুরার শিশুটিকে। পুরো দেশকে অপরাধবোধে ও লজ্জায় ডুবিয়ে দুনিয়া ছেড়েছে সে। মাত্র আট বছরের জীবনের পরিধি তার।
ধর্ষকরা পৈশাচিক নির্যাতন চালায় ছোট্ট এই দেহে। গতকাল দুপুর ১টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষণা করে।
মৃত্যুর খবরের পরই দেশজুড়ে নেমে আসে শোক। বেড়েছে ক্ষোভ। দোষীদের প্রকাশ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার দাবি তুলেছেন সাধারণ মানুষ। শোক জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংগঠন ও বিশিষ্টজনরা।
প্রধান উপদেষ্টা দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে গতকাল দুপুরে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
শিশু ধর্ষণের বিচার আগামী সাত দিনের মধ্যে শুরু হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, 'সাত দিনের মধ্যে বিচার শুরুর আশা করছি। আমি বিচারের স্বাধীনতার কথা বলছি। আমি বলেছি, অতীতে নজির আছে ৭-৮ দিনের মধ্যে বিচার কাজ শুরু হওয়ার। ৭-৮ দিনের মধ্যে রায় হয়েছে, অতীতে এমন নজির আছে, ফলে আমরা আশাবাদী।'
মাগুরার সেই শিশুটিকে বাঁচানো গেল না
প্রথম আলোর প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাগুরার সেই শিশুটিকে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বেলা একটায় মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক কর্নেল নাজমুল হামিদ প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কর্নেল নাজমুল হামিদ বলেন, আজ সকালবেলা দুই দফায় শিশুটির ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ (আকস্মিকভাবে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া) হয়। সিপিআর দেওয়ার পর তাঁর হৃৎস্পন্দন ফিরে এসেছিল। কিন্তু দুপুর ১২টায় তাঁর আবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। এই দফায় সিপিআর দেওয়ার পরও তার হৃৎস্পন্দন ফেরেনি। বেলা একটায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানানো যাচ্ছে, মাগুরায় নির্যাতনের শিকার শিশুটি আজ বেলা একটায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছে। সিএমএইচের সর্বাধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শিশুটির আজ সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। দুবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃৎস্পন্দন ফিরে আসেনি।
আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ৮ মার্চ শিশুটিকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকার সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। শিশুটির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শিশুটির শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে। যেকোনো প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ
জবাব দিতে সময় চেয়েছে বেশির ভাগ দল
মানবজমিন পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে মতামত দিতে বিএনপি ও জামায়াতসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল সময় চেয়েছে। সাতটি দল কমিশনে মতামত জমা দিয়েছে। সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছে বা যোগাযোগ করেছে ১৬টি দল। বাকি দলগুলো গতকাল পর্যন্ত কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এই তথ্য জানিয়েছে। বিএনপি, জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো মতামত দেয়ার জন্য কয়েকদিন সময় চেয়েছে। এসব দল কমিশনের পাঠানো নির্ধারিত ফরমে টিক চিহ্নে জবাব দিতে চাইছেন না। তারা বিস্তারিত মতামত দেয়ার জন্য সময় চেয়েছেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তারা মতামত জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন।
এ ছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চও কয়েকদিন সময় চেয়ে বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে চিঠি দিয়েছে। মঞ্চও টিক চিহ্ন দেয়ার বিরোধিতা করেছে। বলছে, শুধুমাত্র টিক চিহ্ন চেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবমাননা করা হয়েছে।
গত ১০ই মার্চ মতামত চেয়ে ৩৭টি রাজনৈতিক দলের কাছে ‘স্প্রেড শিট’ পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই সুপারিশের বিষয়ে ১৩ই মার্চের মধ্যে রাজনৈতিক দল ও জোটকে মতামত জানাতে বলা হয়েছিল। এরমধ্যে বিএনপি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গে ফোনে কথা বলে কয়েকদিন সময় চেয়েছে। জামায়াতও সময় চেয়েছে। ওদিকে গণতন্ত্র মঞ্চ কয়েকদিন সময় চেয়ে গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে চিঠি দিয়েছে। এই মতামত পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা শুরু করবে কমিশন।
গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সাতটি রাজনৈতিক দল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মতামত দিয়েছে। ১৬টি রাজনৈতিক দল পূর্ণাঙ্গ মতামত দিতে আরও কয়েকদিন সময় চেয়েছে। বাকি ১৪টি দলের সঙ্গে কমিশন আবার যোগাযোগ করছে। গতকাল বিকাল ৪টার মধ্যে মতামত দেয়া সাতটি দল হলো-লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম ও ‘আমজনতার দল’।
এ দলগুলোকে নিয়ে আগামী মঙ্গল ও বুধবার নাগাদ আলোচনা শুরু করা হতে পারে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ ভবনে দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা করা হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, সংবিধানসহ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে ছয়টি কমিশন করেছে, তার আলোকে ছায়া কমিটি করেছে বিএনপিও। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যেসব সুপারিশ চেয়েছে, সেসব নিয়ে এই ছয় কমিশন কাজ করছে। পূর্ণাঙ্গ মতামত তৈরি হতে আরও কিছু সময় লাগবে। রিপোর্ট তৈরি হওয়ার পর দলটি যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোটের সঙ্গে কথা বলবে। এরপরে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে রিপোর্ট জমা দেবে। আর টিক চিহ্ন বিষয়ে দলটি অনীহা প্রকাশ করেছে। এটাকে দলটি সংক্ষিপ্ত মনে করছে। কারণ দলটি সংবিধানের সংস্কারের জন্য যে প্রস্তাব তৈরি করেছে তার ইতিমধ্যে ১ হাজার পৃষ্ঠা ছাড়িয়ে গেছে। তারা পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেবে।
ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু আজ
ঈদযাত্রায় নিরাপত্তা শঙ্কা
বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের দুর্ভোগ নতুন কিছু নয়। প্রতি বছরই সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তবে এবার বাড়ি ফেরা মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, সম্প্রতি চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি বেড়ে যাওয়ায় মহাসড়কে এবার নিরাপত্তার আশঙ্কা রয়েছে।
ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে এবার ভয়াবহ যানজটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে আমিনবাজার, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, ধোলাইপাড়, বাবুবাজার এলাকায় দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে হতে পারে। শুধু ঢাকার এসব স্থানই নয়, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ১৫৯ স্থানে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত রবিবার সড়ক ও মহাসড়ক, সেতু ও রেলপথের যাত্রীদের যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে আয়োজিত আন্তমন্ত্রণালয় সভা হয়। সভায় যানজট, সড়ক সংস্কার, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ, টোল আদায়ে ইটিসি বুথ চালুসহ কয়েকটি বিষয় আলোচনা হয়েছে।
ঢাকার বাস টার্মিনাল ও স্ট্যান্ডে পকেটমার, চোর, মলম পার্টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা গাবতলী, মহাখালী, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনার নির্দেশ দেন। এজন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে একজন করে প্রতিনিধি, বিআরটিএর একজন প্রতিনিধি ও ডিএমপির একজন প্রতিনিধি নিয়ে মোট চারজনের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়।
সভায় আলোচনা হয়েছে মহাসড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি প্রসঙ্গেও। সবচেয়ে বেশি ডাকাতি হয় ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। বিশেষ করে প্রবাসীদের গাড়িগুলো বেশি ডাকাতির কবলে পড়ে। এ ছাড়া বাসে ভাড়া বেশি রাখা হয় ঈদের আগে। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা বলেন, মহাসড়কে অন্ধকার ও ডাকাতপ্রবণ এলাকাগুলো পুলিশ মনিটরিংয়ে রাখবে এবং টহল জোরদার করবে।
সভায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়কের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে সারা দেশে যানজটের জন্য ১৫৯টি স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে আছে সবচেয়ে বেশি ৫৪টি স্পট। এর পরই রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ৪৯ স্পট। এ ছাড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে আছে ৪২ স্পট। ঢাকা-পাটুরিয়া-আরিচা মহাসড়কে আছে আটটি গুরুত্বপূর্ণ স্পট এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে আছে ছয়টি স্পট।
ঢাকা-রংপুর ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কা করা হয়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অনেক জায়গায় খানাখন্দ আছে। এ ছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বাজার বসায় যানজট সৃষ্টি হয়।
মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখার বিষয়ে আলোচনা উঠলে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রায় ৭০০ পুলিশ সদস্য কাজ করবেন। তবে আমরা দেখেছি ৩৮ থেকে ৩৯টি সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। যেগুলো দ্রুত মেরামত করা দরকার। আর কিছু জায়গায় যানজট হতে পারে, সেগুলো আমরা দেখব।
লালমনিরহাট-বুড়িমারী দুই লেনের সড়কের অবস্থা খুবই শোচনীয়। ঈদের আগে মেরামত না করলে যান চলাচল থমকে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক।
সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেল মাগুরার শিশুটি
কালের কণ্ঠ পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাগুরায় নির্মম যৌন নির্যাতনের শিকার আট বছর বয়সী শিশুটিকে আর বাঁচানো গেল না। নিপীড়কদের পাশবিক নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে কয়েক দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিল সে। গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে তার বাঁচা-মরার কঠিন লড়াই। দেশের অগণিত মানুষকে কাঁদিয়ে সে চলে গেছে না-ফেরার দেশে।
এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখের বাড়িতে রাত ৮টার দিকে ভাঙচুর শুরু করে আগুন লাগায়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভাঙচুর চলছিল।
গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানানো যাচ্ছে, ‘মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটি আজ দুপুর ১টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। সিএমএইচের সর্বাধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
শিশুটির আজ সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। দুবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃত্স্পন্দন ফিরে আসেনি।’
এই শিশুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এই মামলার আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে গতকাল দুপুরে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। গতকাল ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক কর্নেল নাজমুল হামিদ জানান, সকালে দুই দফায় শিশুটির ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ (আকস্মিকভাবে হৃত্স্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া) হয়। সিপিআর দেওয়ার পর তার হৃত্স্পন্দন ফিরে এসেছিল। কিন্তু দুপুর ১২টায় তার আবার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হয়। এই দফায় সিপিআর দেওয়ার পরও তার হৃত্স্পন্দন ফেরেনি।
দুপুর ১টায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। সিএমএইচে শিশুটির চিকিৎসায় গঠিত বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানান, শিশুটির যৌনাঙ্গে ক্ষত হয়। গলায় বড় ক্ষত ছিল। ওড়নাজাতীয় কিছু দিয়ে শিশুকে ফাঁস দেওয়া হয়েছিল। বুকে প্রচণ্ড জোরে চাপ দেওয়া হয়েছিল। মস্তিষ্কে অক্সিজেন কমে গিয়েছিল।
ঝরেই গেল 'ছোট্ট ফুল' আছিয়া, কাঁদছে দেশ
সমকাল পত্রিকার প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, সবুজ কাপড়ে মোড়ানো কফিন। আট বছরের ছোট্ট শিশু আছিয়া খাতুন সেই কফিনে ‘ঘুমে’। মমতামাখা হাতে সেই কফিন স্পর্শ করছিলেন মা আয়েশা আক্তার। ততক্ষণে জানা হয়ে গেছে, আর কখনও ঘুম ভাঙবে না বুকের নিধি আছিয়ার। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমঘরের সামনে তখন পিনপতন নিঃশব্দ। মধ্যদুপুরে আছিয়া নামে ‘ছোট্ট ফুল’ অকালে ঝরে যাওয়ায় ফাল্গুনের শেষ বিকেলটায় সবার মনে যন্ত্রণার পীড়া। আছিয়ার কফিন যখন বের করে আনা হয়, তখন হঠাৎ ভেঙে যায় নীরবতা। মায়ের হৃদয়ভাঙা আর্তনাদে উপস্থিত সবার চোখের আঙিনায় নোনাজল। ‘আছিয়া আছিয়া’ বিলাপ যেন থামছিল না আয়েশার। মাগুরায় ধর্ষণের শিকার আছিয়া দেশবিদেশের কোটি মানুষের হৃদয় নাড়িয়ে গতকাল দুপুরে চলে গেল অনন্তলোকে।
সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুর ১টার দিকে শিশুটির মৃত্যু হয় বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সমবেদনার পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্র-জনতা। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে মশাল মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
সিএমএইচ থেকে আছিয়ার কফিন নেওয়া হয় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে। সেখান থেকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে তার মরদেহ যায় মাগুরায়। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে শহরের নোমানী ময়দানে জানাজা শেষে শ্রীপুরের সোনাইকুন্ডিতে আছিয়াকে দাফন করা হয়। এদিকে গতকাল রাতে শিশুটিকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তের বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
মাগুরা শহরতলির নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গেল ৬ মার্চ আছিয়া ধর্ষণের শিকার হয়। সেই খবরে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ক্ষোভের আগুন। পালিত হয়ে আসছে ধারাবাহিক প্রতিবাদ কর্মসূচি। মাগুরার নিভৃত পল্লি শ্রীপুরের সোনাইকুন্ডির আছিয়া হয়ে ওঠে শিশু ও নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ‘মশাল’। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও মিছিল ও মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি চলছে। আছিয়ার মা গত ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলো– শিশুটির ভগ্নিপতি সজীব হোসেন (১৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু শেখ (৪২), সজীবের অপ্রাপ্তবয়স্ক ভাই (১৭) এবং তাদের মা জাবেদা বেগম (৪০)। তাদের চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ক্ষুব্ধ জাতির কাঁধে শিশুটির লাশ : অশ্রুমেদুর অনন্ত যাত্রা
মুকুলেই ঝরে গেল মাগুরার ফুল
যুগান্তর পত্রিকার প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, শ্রান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে মাগুরার সেই শিশু। জাগবে না কোনো দিন, চারদিক আলো করে মুকুল থেকে আর ফুটবে না সে । ৮ বছর বয়সে তার পুতুল নিয়ে খেলার কথা। কিন্তু নরপিশাচদের হিংস্র থাবায় মুকুলেই ঝরে গেল মাগুরার সেই ফুল। মানুষরূপী শকুনেরা খাঁমচে খুবলে খেয়েছে তার নরম শরীর। টানা ২০৪ ঘণ্টা ছোট্ট শরীর সেই যন্ত্রণায় ছটফট করেছে। প্রায় এক সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে পৃথিবীকে ধিক্কার জানিয়ে একরাশ অভিমান বুকে চেপে চিরবিদায় নিয়েছে। চিৎকার দিয়ে পৃথিবীতে আগমনের ঘোষণা দেওয়া শিশুটি বিদায় বেলায়ও দেশ নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। কান্নায় ভাসিয়েছে দেশবাসীকে একই সঙ্গে করেছে অপরাধীও। ক্ষুব্ধ মানুষগুলোর চোখের পানিতেই শুরু হয় তার অনন্ত যাত্রা।
রাষ্ট্রযন্ত্র মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে নিরাপত্তা দিতে না পারলেও বাঁচাতে সব ধরনের চেষ্টা করেছিল। প্রতিদিন স্ট্যান্ডার্ড আইসিইউ প্রটোকল অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং সে অনুযায়ী তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে সিএমএইচ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে শিশুটি (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)।
তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে সারা দেশে। ধর্ষকের বিচারের দাবিতে গত কয়েক দিন ধরেই দেশ উত্তাল। এঅবস্থায় বৃহস্পতিবার আসে মৃত্যুর খবর। সঙ্গে সঙ্গে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। দেশব্যাপী ছাত্র-জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষুদ্ধ জনতা মাগুরায় ধর্ষকের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। ধর্ষকদের দ্রুত সময়ের মধ্যে ফাঁসির দাবি তোলেন আন্দোলনকারীরা। ধর্ষণ এবং এর সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসি চেয়েছেন অবুঝ শিশুটির মা। শিশুটির লাশ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে মাগুরায় নেওয়া হয়েছে। এর আগে সিএমএইচে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
রাত সাড়ে ৮টায় মাগুরায় স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শিশুটির লাশ কাঁধে নিয়ে দ্বিতীয় জানাজায় শরিক হন বিক্ষুব্ধ জনতা। সেখানে জানাজা শেষে দাদার বাড়ির কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। শিশুটির মৃত্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি মামলার আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়া স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ অনেকেই শোক প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শিশুটির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছে।
এমআই