ছিনতাইয়ে নয়া ‘আবদার’, বিকাশ-নগদ থেকে টাকা ট্রান্সফার
প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫:৫৯

গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
দেশের বিভিন্ন এলাকায় চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে অপরাধ পরিস্থিতি। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য ক্রমশ বাড়ছে। চুরি-ছিনতাইয়ে নিত্য নতুন কৌশল প্রয়োগ করছে অপরাধচক্র। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নেওয়া হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপের পাসওয়ার্ড। টাকা ট্রান্সফার করে আবার মোবাইল ফেরত দিয়ে দিচ্ছে চক্রটি।
সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নতুন এই কৌশল বেছে নিয়েছে ছিনতাইকারী চক্রটি। এখন কমবেশি সবাই মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন করেন। বেশিরভাগ মানুষ ব্যাংকের অ্যাপ বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করেন। অনেকেই পকেটে বাড়তি টাকা রাখেন না। ছিনতাইয়ের অভিনব এই কৌশলের কারণে আতঙ্কের মুখে পড়ছেন এসব আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত অ্যাপ ব্যবহারকারীরা।
যদিও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টহল ও যৌথ বাহিনীর অভিযান জোরদার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম পরিদর্শনে যাচ্ছেন। তবুও রাজধানীসহ দেশজুড়ে অপরাধ থেমে নেই। পেশাদার ছিনতাইকারী চক্রগুলো বেশি বেপরোয়া।
গত মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার দিকে বনশ্রীতে সুমন খান নামের এক ব্যবসায়ীর পথরোধ করে ছিনতাইকারীরা।
তিনি বলেন, ‘শুরুতেই তাদের প্রশ্ন ছিল মোবাইলে নগদ, বিকাশ বা রকেট অ্যাকাউন্ট আছে কিনা? অস্বীকার করলে ফোন নিয়ে তল্লাশি করে ছিনতাইকারীরা। পরে বিকাশের অ্যাপ পেয়ে আমাকে মারধর করে। অস্ত্রের মুখে পাসওয়ার্ড নিয়ে অ্যাকাউন্টে থাকা ২৮ হাজার টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে চলে যায়।’
একই স্টাইলে শনিরআখড়ায় ছিনতাইয়ের শিকার হন ধোলাইরপাড়ের বাসিন্দা মেহেদী হাসান। কিন্তু তার বিকাশ অ্যাকাউন্টে মাত্র ৪০ টাকা ছিল। তিনি জানান, ‘বিকাশে টাকা না থাকায় তার গায়ে হাত তুলে ছিনতাইকারীরা। তবে মারধরের পর তার ফোনটি ফিরিয়ে দেয় তারা। বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে দনিয়া কলেজ এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরনের ঘটনা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। বড় ঘটনা ছাড়া ছিনতাইয়ের ছোটখাট এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীরাও সাধারণত পুলিশের দ্বারস্থ হন না। যে কারণে এখন পর্যন্ত মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ গ্রাহকদের ছিনতাইয়ের তথ্য জানা নেই পুলিশের।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘এ ধরনের তথ্য এখনো পায়নি ডিএমপি। তবে কেউ যদি এ ধরনের ঘটনার শিকার হন, তাদেরকে নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করুন।’
এছাড়াও সংশ্লিষ্ট মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন ডিএমপির এই কর্মকর্তা।
তবে উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা নিরাপদ রাখতে গ্রাহকদের সতর্ক করার পাশাপাশি কোনো পরামর্শ আছে কী না? এমন প্রশ্নে বিকাশের জনসংযোগ কর্মকর্তা সামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘প্রতিটি গ্রাহকের ফোন, বিকাশের পাসওয়ার্ড তার কাছে মূল্যবান। বিকাশ সবসময়ই এসব বিষয়ে অন্যকে জানানো থেকে বিরত থাকার কথা বলে সতর্ক করে থাকে।’
তিনি জানান, যদিও অস্ত্রের মুখে এসব তথ্য গোপন রাখা কঠিন- এ অবস্থায় গ্রাহকদের করণীয় কী, তা নিয়ে বিকাশের নিরাপত্তা উইংসের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।
সামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রাহকদের সতর্ক করবে বিকাশ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিকাশ কর্তৃপক্ষ গ্রাহক স্বার্থ নিয়ে উদ্বিগ্ন।’
এ বিষয়ে দেশের অন্যতম মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদের কারও সাথেই এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
নগদের জনসংযোগ কর্মকর্তা সজল জাহিদের কাছে গ্রাহকদের জন্য কোনো পরামর্শ কিংবা সতর্কতামূলক কোনো বক্তব্য আছে কিনা- জানতে চাইলে বাংলাদেশের খবরকে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে আমার বক্তব্য দেওয়ার এখতিয়ার নেই। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রশাসনিক বিভাগে লোক আছেন।’
- এনএমএম/এমআই/ওএফ