Logo

বিশেষ সংবাদ

পিলখানা হত্যাকাণ্ড

সাবেক সেনা কর্মকর্তার সাক্ষাৎকারে চাঞ্চল্যকর তথ্য

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:০৪

সাবেক সেনা কর্মকর্তার সাক্ষাৎকারে চাঞ্চল্যকর তথ্য

বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস এবং রহস্যময় ঘটনা ছিল পিলখানা হত্যাকাণ্ড, যা ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঘটে। ওই ঘটনায় ৫৭ জন সেনা অফিসারসহ ৭৪ নিহত হন। এর পরপরই এক বিস্তৃত তদন্ত শুরু হয়, তবে এ হত্যাকাণ্ডের পেছনের প্রকৃত কারণ, ষড়যন্ত্র এবং বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। এসব নিয়ে বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) এস এম এ সালাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার আনোয়ার হোসাইন সোহেল। এ সময় এস এম এ সালাম বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেন। তিনি দাবি করেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডটি কোনোভাবেই ডাল-ভাতের মতো সামান্য ইস্যুতে নয়; বরং এটি রাষ্ট্রবিরোধী গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। 

এস এম সালাম তার সাক্ষাৎকারে প্রথমেই বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পেছনে শুধুমাত্র ‘ডাল-ভাতের’ মতো সাধারণ কোনো কারণ ছিল না; বরং এটি একটি গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। 

তিনি দাবি করেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ছিল একটি পরিকল্পিত অপারেশন, যেখানে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং বিশেষ কিছু শক্তিশালী গোষ্ঠীর হাত ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদিও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিডিআরের সদস্যদের বিদ্রোহকে “আন্দোলন” হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল, কিন্তু আসল ঘটনা ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যা একদিকে যেমন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে অভিযুক্ত করা হয়েছিলো, অন্যদিকে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়েছিল।’

রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র এবং হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ
সাক্ষাৎকারে লে. কর্নেল এস এম সালাম বলেন, ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পেছনে থাকা মূল কারণ ছিল রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, যা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে।’

 তিনি আরও জানান, এ ঘটনার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় অনেক অনিয়ম হয়েছে। হাসিনা সরকার মায়া কান্নার মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা আড়ালের চেষ্টা করেছে। দলীয় সাংবাদিকদের দিয়ে (যেমন মুন্নিসাহারকে দিয়ে) দেশ প্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জনগণের কাছে ‘ভিলেন’ হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়েছে।  

জোরপূর্বক সাক্ষ্য দেওয়ানো এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল
তিনি বলেন, ‘ঢাকা আলিয়া মাদ্রায়ায় সাক্ষী দিতে গিয়ে অপেক্ষা করা অবস্থায় আমি দেখেছি, একজন সাক্ষীকে জোর করে নাসির উদ্দিন পিন্টুর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সাক্ষ্য না দিলে মামলায় তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। ওই সাক্ষী বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। ওই সাক্ষী তখনই বলেছিলেন- আমি পিন্টুর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে পারবো না। অথচ এই মামলায় কোনোভাবেই নাসির উদ্দিন পিন্টু জড়িত ছিলেন না। ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস সেদিন মাইকে লোকজনকে ঢেকে ছিলেন, বিডিআর সদস্যদের পালিয়ে যেতে। কিন্তু তাপসের নাম বাদ দিয়ে সেখানে পিন্টুকে জড়ানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে।’ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীই মিথ্যা সাক্ষী তৈরি করেছেন, যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য বলে দাবি করেন লে. কর্নেল এস এম সালাম। 

সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা আরও জানান, বর্তমানে বিডিআর সদস্য যারা জেলে আছেন এবং ছিলেন তাদের পরিবার দাবি করছে যে, তারা অনেকই নির্দোষ ছিলেন কিন্তু এটা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা। তবে খুনের আসামি ছাড়া যারা অন্যান্য মামলায় দোষী সাবস্ত হয়েছিলেন, তাদের কেন ১৫ বছর জেলে রাখা হলো তার পুরো দায় পতিত হাসিনা সরকারেরই।  


শেখ হাসিনার সখ্যতা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা যখন ভারতকে বিভিন্ন সুবিধা দিয়েছেন, তখন তার নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তির ভিত্তি মজবুত করার জন্য তিনি এটি করেছেন। তিনি দাবি করেন, ভারতের স্বার্থের সাথে যোগসাজশে এই হত্যাকাণ্ড ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে, যার মাধ্যমে সরকার নিজের ক্ষমতা ধরে রেখেছে।’

বিচারের নামে নাটক
কর্নেল সালাম আরও বলেন, ‘বিচার প্রক্রিয়ায় একাধিক নাটক রচিত হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে কোর্ট অব ইনকোয়েরিতে যেসব বিডিআর সদস্যদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিলো। তাদের অনেককেই প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন ডিজি বিডিআর মেজর জেনারেল মঈনুল হোসেন এবং সেক্টর কমান্ডার ঢাকা কর্নেল আজিজ (পরবর্তীতে সেনাপ্রধান হন) প্রভাব খাটিয়ে মামলা থেকে বাদ দিয়েছেন। যার ফলে অনেক অপরাধী ছাড় পেয়ে গেছে।’ 

তিনি অভিযোগ করেন, ‘এই হত্যা মামলাগুলোর সঠিক তদন্তই হয়নি। বিচার প্রক্রিয়াতো পরের বিষয়। এই মামলায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে অনেক ক্ষেত্রেই অসঙ্গতিপূর্ণ রায় দেওয়া হয়েছে।’

পরিকল্পিত বিচারের অভাব
সাক্ষাৎকারের শেষ অংশে এস এম এ সালাম বলেন, ‘যারা হত্যা, বিদ্রোহ, পরিকল্পনা এবং ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলো (শেখ সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, শেখ ফজলে নুর তাপস এ ছাড়াও আরেও অনেক আ.লীগ নেতা), তাদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকার তদন্তেরই অনুমতি দেয়নি।

এএইচএস/বিএইচ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর