
ডিজিটাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১৪:১১

বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনে চলছে মহাকর্মযজ্ঞ। আগামী ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের টার্গেট নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অক্টোবরে হতে পারে তফসিল ঘোষণা। নির্বাচনি
জুলাইয়ে প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচনী সংলাপে বসার পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন। সংলাপে দলগুলোর কাছে প্রস্তুতি তুলে ধরবে ইসি। এ জন্য তফসিলের আগে ছয় মাসের নির্বাচনী রোডম্যাপ (কর্মপরিকল্পনা) নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ইসি। আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারিত শর্ত পূরণ করে আবেদন করতে বলেছে কমিশন। ডিসেম্বরে ভোট করতে অক্টোবরে তফসিল দেওয়ার প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। নতুন দলের আবেদন নেওয়ার পর তা যাচাইবাছাই করতে তিন-চার মাস সময় লাগে। সে হিসেবে আগস্টের মধ্যে কাজটি শেষ করতে চায় বর্তমান কমিশন। এ ছাড়া নির্বাচনী মালামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে নির্বাচনী আইন; সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজও শেষ হবে জুলাই-আগস্টের মধ্যে।
সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি ও নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগস্টের মধ্যে সব কাজ শেষ করব। আগস্টের আগেই আমরা বিজ্ঞপ্তি (পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন) প্রকাশ করতে পারব।’
নির্বাচনী মালামাল কেনাকাটার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আমরা ডিসেম্বরে করব বলে টার্গেট করেছি। আর অর্থবছর শুরু হয় জুলাইতে। ভোটের কাগজপত্র, ব্যালট পেপারসহ অন্যান্য মালামাল কেনাকাটা আগামী অর্থবছরের ইস্যু। তাই আমরা এগুলো আগামী বাজেটের জন্য অন্তর্ভুক্ত করে পাঠালে সরকার সে অনুযায়ী বরাদ্দ দেবে।’ সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আইনের সংশোধনী আমাদের হাতে এলেই কাজ শুরু করতে পারব। আমাদের প্রস্তুতিমূলক কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা অনেক কাজেই এগিয়ে আছি।’
নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভোটার তালিকা; ভোট কেন্দ্র; সংসদীয় আসনবিন্যাস; পর্যবেক্ষক নীতিমালা; সাংবাদিক নীতিমালাসহ অন্যান্য আইনকানুনের কাজ যখন শেষ হবে তখন আমরা নির্বাচনী সংলাপের দিকে যাব। এ ক্ষেত্রে তফসিল ঘোষণার কিছুদিন আগে আমরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসব।’ তিনি বলেন, ‘অক্টোবরের দিকে যদি আমরা তফসিল ঘোষণার চিন্তা করি। তখন অক্টোবরের আগেই আগস্ট-সেপ্টেম্বরে কাজগুলো করতে হবে।’
সব মিলে জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ পর্যায়ে আনতে হবে বলে জানান তিনি। এদিকে ইসি সচিবালয় ‘তফসিল ঘোষণার পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী কার্যক্রম’ শীষক একটি খসড়া কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেই সব কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। প্রতিটি কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করেই চলছে কার্যক্রম। জানা গেছে, ইসির কর্মপরিকল্পনায় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনের বিষয়ও থাকবে।
সূত্র জানিয়েছে, ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার পরিকল্পনা নির্বাচন কমিশনের হাতে এলে সে অনুযায়ী অনেক কাজ চূড়ান্ত হবে। কেননা নির্বাচনী সংস্কারের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশসহ (আরপিও) অন্যান্য নির্বাচনী আইনকানুন সংশোধন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিয়ে আইনবিধি সংস্কার, ভোটার তালিকা প্রস্তুত, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তুতি চলছে। যাতে রাজনৈতিক দলের সংলাপ নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে স্বচ্ছ ধরণা দিতে পারে নির্বাচন কমিশন।
২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন বহাল
প্রথম আলো পত্রিকার প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, সাড়ে পাঁচ বছর আগে বুয়েটের একটি হলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে তখন দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের সবাই ছিলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের (এখন নিষিদ্ধ সংগঠন) নেতা-কর্মী। এ ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতের দেওয়া সেই রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই রায়ের মধ্য দিয়ে সমাজে বার্তা গেল, আপনি যত শক্তিশালীই হোন না কেন, আপনার পেছনে যত শক্তিই থাকুক না কেন, সত্য ও ন্যায়বিচার একদিন প্রতিষ্ঠিত হয়।’
নিম্ন আদালত ২০ জনকে ফাঁসি দিয়েছিলেন, ৫ জনকে যাবজ্জীবন দিয়েছিলেন, সেটা হাইকোর্টের রায়ে বহাল রয়েছে বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল। হাইকোর্ট কোনো পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পর্যবেক্ষণের বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে জানা যাবে। নিম্ন আদালত তাঁর রায়ে যে ফাইন্ডিংস (পর্যবেক্ষণ) দিয়েছেন, সেখানে হস্তক্ষেপ করার মতো কিছু পাননি হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রায়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ হিসেবে তাঁরা সন্তুষ্ট। তাঁরা মনে করেন, আবরার ফাহাদের বাবা ন্যায়বিচার পেয়েছেন। গোটা জাতি ন্যায়বিচার পেয়েছে। একটি রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থায় ডিসিপ্লিন (শৃঙ্খলা) আনার জন্য, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য বিচার বিভাগের যে ধারণা, সে ধারণা আবারও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এ মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে বিচারক বলেছিলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একে অপরের সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনেন এবং নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে তাকে হত্যা করেন। এ ঘটনা বাংলাদেশের সব মানুষকে ব্যথিত করেছে। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনো না ঘটে, তা রোধকল্পে সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
আপিলেও বহাল শহীদ আবরার খুনিদের দণ্ড
আমার দেশ পত্রিকার প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যামামলার হাইকোর্টের রায়েও ছাড় পেল না অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ জনের রায়ই বহাল রাখা হয়েছে উচ্চ আদালতে। সে সঙ্গে বহাল রয়েছে ৫ জনের যাবজ্জীবনও।
গতকাল রোববার বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়ে আসামিদের আপিল খারিজ করে দেয়। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। তিনি দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানান।
আদালত তার পর্যবেক্ষণে আবরারকে রাতভর পিটিয়ে মারার সময় সংশ্লিষ্ট কেউই তাকে রক্ষায় এগিয়ে না আসায় বিস্ময় প্রকাশ করে। অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ফ্যাসিজম যতই শক্তিশালী হোক, মনুষ্যত্ববোধ জেগে উঠবে। এ রায় ছাত্ররাজনীতির জন্য একটি কঠোর বার্তা।
আপিলে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা আসামিরা হলো বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিতা সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), সদস্য মোজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামূল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুর রহমান মাজেদ (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), এসএম নাজমুস সাদাত।
চালে অস্বস্তি, অন্য পণ্যে স্বস্তি
কালের কণ্ঠ পত্রিকার প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে কিছুটা লাগাম টানা গেছে গত মাসে। শাক-সবজিজাতীয় পণ্যের দাম কিছুটা সহনীয়। তবে এই আত্মতৃপ্তির মধ্যেই নীরবে উত্তাপ ছড়াচ্ছে চালের দাম। বিশেষ করে মিনিকেট হিসেবে পরিচিত চালের দাম এক লাফে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
ফলে অত্যাবশ্যক এই নিত্যপণ্যের দামের এ নৈরাজ্য নতুন করে মূল্যস্ফীতি উসকে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে। মিনিকেটের পাশাপাশি মোটা চালের দামও কেজিতে নতুন করে এক-দুই টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। এতে ভোক্তাদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, গত দুই সপ্তাহেই মিল পর্যায়ে মিনিকেট চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।
এর প্রভাবে খুচরা ও পাইকারিতে দাম বেড়েছে। চালকল মালিকদের দাবি, বাজারে মিনিকেট চালের ধানের সংকটের কারণে বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে চালের দাম বেড়েছে। এদিকে রোজা শুরুর আগে থেকেই টমেটো, আলু, পেঁয়াজসহ শাক-সবজির দাম নাগালের মধ্যে।
গতকাল রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাবুবাজার, বাড্ডা বাজার ও জোয়ারসাহারা বাজার এবং দুই জেলা নওগাঁ ও কুষ্টিয়ার বড় পাইকারি মোকামে খোঁজ নিয়ে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর খুচরা বাজারে দুই সপ্তাহ আগেও ভালো মানের মিনিকেট চাল খুচরায় প্রতি কেজি ৮৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৯২ থেকে ৯৫ টাকায়। তবে মানভেদে কিছু মিনিকেট চাল ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল মানভেদে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মোটা চাল ব্রি-২৮ ও পাইজাম কেজি ৬২ থেকে ৬৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকার বাড্ডার পিরোজপুর রাইস এজেন্সির ম্যানেজার শাহ আলম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মিল পর্যায়ে মিনিকেট চালের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। রোজার শুরুতে মোজাম্মেল মিনিকেট চালের বস্তার (৫০ কেজি) দাম ছিল চার হাজার ১২০ থেকে চার হাজার ১৩০ টাকা। সেই চালের দাম বেড়ে হয়েছে চার হাজার ৬৪০ টাকা। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তায় বেড়েছে ৫১০ থেকে ৫২০ টাকা, অর্থাৎ কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১০ টাকার মতো। অবিশ্বাস্য হারে দাম বাড়ার কারণে মিনিকেট চালের বিক্রি কমে গেছে। মোটা চালের মধ্যে ব্রি-২৮ বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে দুই হাজার ৮২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
চালের ভরপুর জোগান, তবু লাফিয়ে বাড়ছে দাম
সমকাল পত্রিকার প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, বন্যায় চাষাবাদে ধাক্কা খেলেও এবার আমন উৎপাদন হয়েছে ভরপুর, আমদানিও হচ্ছে লাখ লাখ টন চাল। আগামী এপ্রিলের শেষ দিকে বাজারে ঢুকবে বোরো। তার পরও এখন রেকর্ড ছুঁই ছুঁই করছে সরু চালের দাম। ভালোমানের এ জাতের চালের কেজি সর্বোচ্চ ৮৫ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। বেড়েছে মোটা ও মাঝারি চালের দরও।
প্রতিবছর রোজায় শাকসবজি, মাছ-মাংসসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। এবার এসব পণ্যের দর অনেকটা ক্রেতার নাগালে। কোনো কোনো পণ্যের দাম এতটাই কম, কৃষকের উৎপাদন খরচও উঠছে না। অথচ উল্টো পথে চালের বাজার।
ভোক্তা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাল সিন্ডিকেটের ভিত নড়াতে পারেনি সরকার। বাজারে বড় মিলারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে সিটি, প্রাণ, স্কয়ার, আকিজ, এসিআইর মতো বড় বড় কোম্পানি। তারা মৌসুমের সময় কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে মজুত করে। কৃষকের হাতে সামান্য যে ধান থাকে সেগুলোর মজুত ফুরালে শুরু হয় করপোরেট ও মজুতদারের খেলা। এর পর বাজার চলে যায় তাদের নিয়ন্ত্রণে। সংকটসহ নানা ছুতায় ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকে দর। এভাবেই কৃষকের ধান নিয়ে ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণার জাল ফেলেন সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। এতে বেশি বিপদে পড়েছেন মধ্যবিত্তরা।
খুচরা ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, মিলার এবং করপোরেট প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে চালের বাজার অস্থির হচ্ছে। তারা ধানের সংকট বললেও চালের ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুযায়ী চালও মিলছে। তবে অজানা কারণে দাম বেশি নিচ্ছে। তারা বলছেন, সাধারণত রোজায় চালের চাহিদা কম থাকে। ফলে বাজার স্বাভাবিক থাকার কথা। তবে বাজারে নেই সুবাতাস। ধান সংকটের অজুহাতে বাড়ছে দর।
বরাবরের মতো মিলাররা দায় চাপাচ্ছেন ছোট ব্যবসায়ীর ওপর। তাদের দাবি, মিল পর্যায়ে দর কমছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করার কারণে বাজার চড়েছে। যদিও মিলারদের তথ্য বলছে, পাইকারি মোকামে চালের বাড়তি দর দেখা গেছে।
গতকাল রোববার ঢাকার কারওয়ান বাজার, মগবাজারসহ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি গুটিস্বর্ণা বা মোটা চাল ৫৪ থেকে ৫৫, পাইজাম চাল ৫৫ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে এসব চাল দুই-এক টাকা কমে কেনা গেছে। বিআর-২৮ জাত বা মাঝারি চালের কেজি গত সপ্তাহের চেয়ে দুই থেকে তিন টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায়। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সরু বা মিনিকেট জাতের চালের দর। বর্তমানে এ জাতের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা দরে। গত সপ্তাহে এ ধরনের চালের কেজি ছিল ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। সে হিসাবে এক সপ্তাহে সরু চাল কেজিতে বেড়েছে সর্বোচ্চ ৭ টাকা।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, বাজারে গত এক বছরে মিনিকেট চালের দর বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। মাঝারি চালের প্রায় ১৪ এবং মোট চালের ৫ শতাংশ দর বেড়েছে।
উৎপাদন এলাকায়ও দর চড়া : শুধু ঢাকায় নয়, উৎপাদন এলাকাগুলোতেও চালের দর চড়া। নওগাঁ শহরের আড়তদারপট্টির পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সততা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী সুকুমার ব্রহ্ম বলেন, গত এক সপ্তাহে সরু চালে ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। বড় কোম্পানি এবং মিলাররা এখন চাল ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা ধান মজুত রেখে এখন দাম বাড়াচ্ছে। কয়েক মাস ধরে মজুতবিরোধী অভিযান নেই। করপোরেট পর্যায়ে তদারকি নেই। এ জন্য বাজার অস্থিতিশীল।
জয়পুরহাটের আকন্দ অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী ও কালাই উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল আজিজ আকন্দ বলেন, বাজারে কাটারি ধানের আমদানি নেই। তাই হঠাৎ চিকন চালে কেজিপ্রতি ২ টাকা বেড়েছে। তবে মোটা চাল নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিপদে আছেন।
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, আমদানির কারণে মোটা চালের দাম স্থিতিশীল। তবে সরু জাতের কোনো ধান নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, এখন চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আকিজ, টিকে, এসিআই ও স্কয়ারের মতো বড় বড় করপোরেট কোম্পানি। তাদের ইচ্ছামতো দর বাড়ে-কমে।
চালের বাজারে বড় কোম্পানিগুলোর নামমাত্র অংশ রয়েছে বলে জানান করপোরেট সংশ্লিষ্টরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসিআইর এক কর্মকর্তা বলেন, চালের বাজারের মাত্র ৫ শতাংশ করপোরেটদের হাতে রয়েছে। বাকি ৯৫ শতাংশ হাসকিং ও অটো মিলারদের দখলে। তাই করপোরেটদের বিরুদ্ধে দাম বাড়ানোর যে অভিযোগ, তা অসত্য।
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন ৫
সাজা বহাল ২৫ আসামির
যুগান্তর পত্রিকার প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, সাড়ে পাঁচ বছর আগে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করার মামলায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ২৫ জনের সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। নিম্ন আদালত ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবনের রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৬ জন কারাগারে এবং ৪ জন পলাতক রয়েছেন। আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানির ওপর রোববার এ রায় দেন বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আপিল বেঞ্চ। রায় ঘোষণার পর আদালতের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, নিম্ন আদালত যে ফাইন্ডিংস দিয়েছেন, এখানে ইন্টারফেয়ার করার মতো কিছু নেই।
এদিকে এ রায়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী ন্যায়বিচার পাননি বলে দাবি করেছেন দুই আসামির আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু। রায়ের সার্টিফায়েড কপি হাতে পাওয়ার পর তারা আপিল দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন। রায়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। রায় যাতে অতিদ্রুত কার্যকর হয় সেটাই এখন আমাদের চাওয়া। আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বলেন, একজন আসামি, যিনি আবরার ফাহাদকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন, তার পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ছয় মাস পরে কেন জানানো হলো, সেটি বোধগম্য নয়। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, হাইকোর্টের এই রায় চূড়ান্ত বিচার নয়। এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হলে আসামিপক্ষ আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করবে। আপিলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করবেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ দায়ের হলে সেটিও নিষ্পত্তি করবেন আপিল বিভাগ। রায়ে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকলে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি যাবে কারাগারে। কারা কর্তৃপক্ষ কারাবিধি অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ব্যবস্থা করবেন। তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ পাবেন।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের বাবা রাজধানীর চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ করে ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), জেল আপিল ও আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছিলেন। রোববার রায় ঘোষণা করলেন হাইকোর্ট।
রোববার বেলা ১১টায় বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চে রায় ঘোষণা শুরু হয়। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান রায় পাঠ করে শোনান। এ সময় আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ, ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ ও তাদের আত্মীয়স্বজনসহ বিপুলসংখ্যক আইনজীবী, গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন। রায়ে বিচারিক আদালতে দেওয়া ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখেন আদালত।
এমআই
প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন