
ডিজিটাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৫, ১০:১০
-67e4bcc2f2da5-67e621185d0ca.jpg)
প্রথম আলোর প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড হয়েছে। মার্চ মাসের প্রথম ২৬ দিনে দেশে এসেছে ২৯৪ কোটি মার্কিন ডলার। এর আগে কোনো একক মাসে দেশে এত প্রবাসী আয় আসেনি। প্রবাসী আয়ের রেকর্ডের এই হিসাব গত বুধবার পর্যন্ত। এরপরের কয়েক দিনের প্রবাসী আয়ের হিসাব যুক্ত হলে মার্চ শেষে প্রবাসী আয় ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মার্চের শুরু থেকে প্রবাসী আয়ের যে ধারা, সেটিকে বিবেচনায় নিলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় মাস শেষে চূড়ান্ত হিসাবে তা ৩০০ কোটি বা ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। সেটি হলে দেশের ইতিহাসে প্রবাসী আয় ৩০০ কোটি ডলারের মাইলফলকে পৌঁছাবে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সব মিলিয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৫২ কোটি ডলার। মার্চে প্রতিদিন গড়ে ১১ কোটি ৩২ লাখ ডলার করে প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম ঈদ সমাগত। এই ঈদ সামনে রেখে বিদেশ থেকে প্রবাসীরা বৈধ পথে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে প্রবাসী আয় দেশে পাঠাচ্ছেন। ব্যাংকাররা বলছেন, মূলত অর্থ পাচার কমে যাওয়ায় প্রবাসীরা তাঁদের আয় পাঠাতে বৈধ পথ বেছে নিয়েছেন। প্রবাসী আয়ের পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। তার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ, ডলারের বিনিময় মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক লেনদেন ভারসাম্যের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক চলতি ও আর্থিক হিসাবেরও উন্নতি হয়েছে।
প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোয় ডলারের যে সংকট চলছিল, তা অনেকটা কেটে গেছে বলে ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান। তারা বলছেন, ডলারের দাম নিয়ে অস্থিরতা কমেছে। ব্যাংকগুলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ ১২৩ টাকার মধ্যেই প্রবাসী আয় কিনছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, প্রবাসী আয়ের গতিধারা অত্যন্ত ইতিবাচক। প্রবাসী আয় বেশি আসায় রিজার্ভের পতনের ধারা ঠেকানো গেছে। তবে রিজার্ভ এখনো স্বস্তির জায়গায় নেই। প্রবাসী আয়ের এই প্রবাহ ধরে রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ। ঈদের পরও যেন বর্তমান ধারা ঠিক থাকে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য বৈধপথে প্রবাসী আয় আসার বাধাগুলো দূর করতে হবে।
মুক্ত পরিবেশে মিলছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা
আমার দেশ পত্রিকার প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, প্রায় ১৭ বছর পর পরিবারের সঙ্গে নির্ভয়ে ঈদ কাটাবেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সেইসঙ্গে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সময়ে যুগপৎ আন্দোলন-সংগ্রামের সহযোগীদের সঙ্গেও ঈদ কাটাবেন তারা। ঈদকে কেন্দ্র করে যার যার সংসদীয় আসনে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে জনসংযোগ করবেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। পাশাপাশি ১৭ বছরে গণতন্ত্র পুনরদ্ধার ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যারা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। তাদের পরিবারের পাশে ঈদ উপহার নিয়ে দাঁড়াবেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
এর আগে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সময়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা হয় জেলে না হয় আত্মগোপনে ঈদ উদযাপন করেছেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে রাজনীতির মাঠে সবচেয়ে ভালো সময় পার করছে বিএনপি। বিপ্লবের পর একটা মুক্ত পরিবেশে ঈদ উদযাপন করবেন দলটির নেতাকর্মীরা। সেই সঙ্গে নির্বাচন সামনে হওয়ায় নেতাকর্মীদের চাঙা করা ও এলাকার মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে সংসদীয় এলাকায় ঈদ করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
কলকাতায় ইফতার পার্টির নামে সক্রিয় কোর গ্রুপ
সরকার উৎখাতে ষড়যন্ত্র
যুগান্তর পত্রিকার প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, খোলস ছেড়ে ধীরে ধীরে গর্ত থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা। বিশেষ করে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়া এই দলটির সাবেক মন্ত্রী, সংসদ-সদস্যসহ শীর্ষ নেতাদের অনেকে ইফতার পার্টির নামে নয়া ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন। মূলত বাংলাদেশের ভেতরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে উৎখাত করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য। আওয়ামী ঘনিষ্ঠ দেশি-বিদেশি চক্র এ এজেন্ডা বাস্তবায়নে এখন পুরোমাত্রায় সক্রিয়। এজন্য কলকাতা, আগরতলা, মেঘালয় ও দিল্লির মাটিকে নির্বিঘ্নে ব্যবহার করার সুযোগও পাচ্ছেন পলাতক আওয়ামী নেতারা। ষড়যন্ত্র সফল করতে কোর গ্রুপ তৈরি করে ঘনঘন বৈঠকে বসছেন তারা। মধ্য রমজান থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত অন্তত পাঁচ দফা বৈঠকে মিলিত হওয়ার খবর মিলেছে।
এদিকে ভারত ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারাও ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হটাতে একাট্টা। কীভাবে বিদেশে বসে দেশের মধ্যে নানারকম অঘটন ঘটিয়ে সাধারণ মানুষকে সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলা যায়, সে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। সবশেষ ষড়যন্ত্রের উত্তপ্ত কড়াইয়ে ঘি ঢালার অবস্থা তৈরি হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বর্তমান চীন সফরকে কেন্দ্র করে। এ সফরে সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ ভারত। কেননা, ঢাকা যদি এ মুহূর্তে ভূরাজনৈতিক স্বার্থসুরক্ষার প্রশ্নে চীনের কবজায় চলে যায়, তাহলে ড. ইউনূস সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বেশ বেগ পেতে হবে। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বৃহস্পতিবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা কোনোরকম নাশকতার আশঙ্কা করছি না। তবে আগের চেয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা আরও বাড়ানো হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত আছে। কেউ কোনো ধরনের নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা শক্ত হাতে প্রতিহত করা হবে।’ জানা যায়, রোববার কলকাতার রাজারহাট এলাকায় অবস্থিত নিউটাউন প্লাজায় একটি ইফতার পার্টির আয়োজন করেন সেখানে পালিয়ে থাকা পতিত আওয়ামী লীগের নেতারা। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, ভোলা-৩ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ, ময়মনসিংহ-১০ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল, টাঙ্গাইল-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরসহ শতাধিক নেতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিও সস্ত্রীক ছিলেন এই ইফতার পার্টিতে।
সূত্র জানায়, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ছিলেন এই ইফতার পার্টির আয়োজক। পরদিন সোমবার একই স্থানে আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের পলাতক শতাধিক নেতা ইফতার পার্টির নামে মিলিত হন। বাগেরহাট-৪ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ছিলেন এই ইফতার পার্টির আয়োজক। প্রধান অতিথি হিসাবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও এখানে উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, দুটি ইফতার পার্টিতেই আসাদুজ্জামান খান কামাল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘অবৈধ’ উল্লেখ করে তার সরকারকে যে কোনো মূল্যে উৎখাতে যার যার অবস্থান থেকে জোরালো ভূমিকা পালনের নির্দেশ দেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘অস্ত্র এবং অর্থ-এসবের কোনো অভাব হবে না। যেভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেভাবে আপনারা আপনাদের কাজটা ঠিকঠাক করুন।’ সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে যত দ্রুত উৎখাত করা যাবে, আওয়ামী লীগের ফিরে আসাটাও তত দ্রুত সহজ হবে।
পাচারের অর্থে দুবাইয়ে অট্টালিকা!
কালের কণ্ঠের প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, সিলেটের ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ফকর ব্রাদার্সের দুই কর্ণধার। সম্পর্কে তাঁরা পিতা-পুত্র। তবে অর্থপাচারে তাঁরা একে অপরের সহযোগী। কয়লা ও পাথর আমদানির আড়ালে প্রথমে টাকা পাচার করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
পরে সেই টাকায় কিনেছেন লোভনীয় ‘গোল্ডেন ভিসা’। জুমেইরাহ ভিলেজ সিটিতে যৌথভাবে গড়েছেন ৩৩ তলার বিশাল অট্টালিকা। এর আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩৯৪ কোটি টাকা। এই সম্পদের প্রকৃত তথ্য আয়কর নথিতে গোপন করে কর ফাঁকিও দিয়েছেন অর্ধশত কোটি টাকা।
পাচারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা হলেন ফকর ব্রাদার্সের চেয়ারম্যান ফকর উদ্দিন আলী আহমেদ ও তাঁর ছেলে ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান।
ফ্ল্যাটের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা থেকে শুরু।
অর্থপাচারের প্রমাণ পাওয়ায় এরই মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) পিতা-পুত্রের কর ফাঁকি এবং দেশের সম্পদের তথ্য খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ফকর ব্রাদার্স সংশ্লিষ্ট ১৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে সিআইসির উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্তদল দুবাইয়ে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অর্থপাচার অনুসন্ধানে যায়। ওই তদন্তদল ফকর ব্রাদার্সসহ শতাধিক ব্যক্তির অর্থপাচারের প্রমাণ পায়। এরই মধ্যে একাধিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।
শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক আজ
বেইজিংয়ে ইউনূসকে লাল গালিচা সংবর্ধনা
বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বেইজিংয়ে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়েছে চীন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, গতকাল রাত ১০টা ২০ মিনিটে ড. ইউনূস হাইয়ান প্রদেশ থেকে দেশটির রাজধানী বেইজিং পৌঁছান। এয়ারপোর্টে প্লেন থেকে নামতেই তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানায় চীন। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান দেশটির ভাইস মিনিস্টার সান উইডং। বিমান থেকে নামার পর ড. ইউনূস তাঁর সম্মানার্থে সম্মানজনক লাল গালিচা ধরে হেঁটে যান। এ সময় দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ‘গার্ড অব অনার’ দেন এবং প্রধান উপদেষ্টা গার্ড পরিদর্শন করেন। আজ সকালে বেইজিংয়ের ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপল’-এ দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে ড. ইউনূসের। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে এটিই ড. ইউনূসের প্রথম চীন সফর। এর আগে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে যোগ দিতে চার দিনের সফরে গত ২৬ মার্চ চীনের হাইয়ান প্রদেশে পৌঁছান তিনি। পরদিন ২৭ মার্চ সেখানে ব্যস্ত সময় পার করেন ড. ইউনূস।
এর আগে বিএফএ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তৃতায় এশীয় দেশগুলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও যৌথ সমৃদ্ধির জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানান অধ্যাপক ইউনূস। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত করছে মন্তব্য করে তিনি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়তে এ অঞ্চলের দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
গতকাল বিএফএ সম্মেলনের ফাঁকে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার চেয়ারম্যান বান কি-মুন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)-এর মহাপরিচালক কু ডংগিউও, চীনের স্টেট কাউন্সিলের নির্বাহী উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং জুয়েশিয়াং, রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি ওভারচুক, চীনের এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান চেন হুয়াইউ ও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়নার সাবেক উপ-গভর্নর উ শিয়াওলিং-এর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় তিনি বেইজিংয়ের উদ্দেশে হাইনান ত্যাগ করেন।
এ বছর বিএফএ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হলো- ‘এশিয়া ইন দ্য চেঞ্জিং ওয়ার্ল্ড : টুওয়ার্ডস আ শেয়ারড ফিউচার’। সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আমাদের বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়াতে হবে। আমদানিনির্ভরতা কমাতে হবে। মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে ভোগ সীমিত রাখতে হবে। সমৃদ্ধির জন্য আমাদের একটি সুস্পষ্ট ও অভিন্ন রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনে এশীয় নেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ গত সাত বছর ধরে ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, যারা মিয়ানমারের নাগরিক। এ জন্য আমরা বিপুল সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ব্যয় বহন করে চলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। এশিয়ার নেতাদের একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে এবং তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে হবে। গাজায় গণহত্যার সমালোচনা করে তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব বহুমুখী সংকটে ভুগছে, যেখানে যুদ্ধ ও সংঘাত মানবাধিকারের ক্ষতি এবং অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে। বিশ্বব্যাপী নিন্দা চলমান থাকলেও গাজায় গণহত্যা এখনো চলছে। ফিলিস্তিন সংকট শুধু আরব বা মুসলিমদের বিষয় নয়, এটি একটি মানবিক সমস্যা। তিনি বলেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জলবায়ু দুর্যোগজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় ৬ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমতুল্য। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে সম্পদ ব্যবহার করে দুর্যোগ মোকাবিলা করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ সীমিত করে দিচ্ছে। আমাদের ঋণ-সৃষ্টিকারী নয়, অনুদান-ভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রয়োজন। দুর্নীতি ও আর্থিক অপচয় রোধের আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি ও অবৈধ অর্থপ্রবাহের শিকার। এই ধরনের দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রতি বছর প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়, যা তারা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে যে অর্থ পায় তার চেয়ে বহুগুণ বেশি। এশিয়াকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্পদ পুনরুদ্ধার ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য একটি বহুপক্ষীয় মধ্যস্থতা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সম্মেলনে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার মহাসচিব ঝাং জুন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও বোয়াও ফোরামের চেয়ারম্যান বান কি-মুন এবং চীনের স্টেট কাউন্সিলের নির্বাহী উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং জুয়েশিয়াং বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোর পক্ষে নয় বিএনপি
সমকালের প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোর পক্ষে নয় বিএনপি। পাঁচ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দেওয়া বিএনপির মতামত পর্যালোচনায় এমনটি উঠে এসেছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রস্তাব করেছিল– নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থনে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। বিএনপি এতে একমত হয়নি।
সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের পক্ষে নয় দলটি। আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন, কর্ম কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ চায়। এতে কার্যত প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকবে নিয়োগের ক্ষমতা।
সংবিধান সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে– কেউ জীবনে দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। বিএনপি এ সুপারিশের সঙ্গে একমত হয়নি। দলটি মতামত দিয়েছে, কেউ টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না। তবে বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদের মেয়াদ চার বছর নির্ধারণের সুপারিশেও একমত হয়নি বিএনপি। সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর বহাল রাখতে চায় তারা।
সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে– নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন থাকলেও সংবিধান সংশোধনে গণভোট লাগবে। বিএনপি সংবিধান সংশোধনে গণভোট চায় না।
গত ৫ মার্চ সংস্কার-বিষয়ক পাঁচটি কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ বিষয়ে মতামত জানাতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ‘স্প্রেডশিট’ পাঠায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশন। গত রোববার বিএনপি এ বিষয়ে মতামত জানিয়েছে।
সংবিধান সংস্কারের ৭০টি সুপারিশের মধ্যে ১১টিতে একমত ও তিনটিতে নীতিগতভাবে ঐকমত্য প্রকাশ করেছে তারা। ছয়টি সুপারিশের সঙ্গে আংশিক একমত হয়েছে দলটি। বিএনপি যে ২০ প্রস্তাবের সঙ্গে আংশিক বা পুরো একমত, সেগুলো তারা আগামী সংসদে বাস্তবায়ন চায়।
কমিশন জানতে চেয়েছিল– অধ্যাদেশ, নির্বাচনের আগে গণভোট, নির্বাচনের সময় গণভোট, গণপরিষদ নির্বাচন, নির্বাচনের পর সাংবিধানিক সংস্কার নাকি গণপরিষদ ও আইনসভা নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হবে? সেখানে দলটি সংসদকে প্রাধান্য দেয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলায় অভিযুক্তদের নির্বাচনে অযোগ্য করার সুপারিশ করেছিল নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ ৩১ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ট্রাইব্যুনালে। সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে অভিযুক্তরা নির্বাচন করতে পারবেন না। অন্য আদালতের মতো দণ্ডিত হতে হবে না।
বিএনপি এ সুপারিশের সঙ্গে একমত নয়। দলটির মতে, এই মুহূর্তে প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ অনাবশ্যক।
এমআই